মেট্রোরেল রচনা । Class 3,4,5 । ১০০০ শব্দে মেট্রোরেল রচনা ।

আজকের পোস্টের প্রধান বিষয় হলো মেট্রোরেল রচনা সম্পর্কে। যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। ১০০০ শব্দে মেট্রোরেল রচনা আজকের পোস্ট এর মধ্যে তুলে ধরা হলো। শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে এই রচনা পড়তে পারবে। এই রচনাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
মেট্রোরেল রচনা । Class 3,4,5 ।  ১০০০ শব্দে মেট্রোরেল রচনা ।
মেট্রোরেল রচনা । Class 3,4,5 । ১০০০ শব্দে মেট্রোরেল রচনা ।

তাহলে চলুন জেনে নেই মেট্রোরেল রচনা সম্পর্কে।

মেট্রোরেল রচনা

ভূমিকা

আমাদের রাজধানী ঢাকাতে এই প্রথম নির্মাণ করা হয়েছে মেট্রোরেল এর। ঢাকা শহর অনেক জনবহুল একটা জায়গা। এইখানে প্রতিদিন মানুষের অনেক বেশি পরিমানে জ্যামের কষ্ট সহ্য করতে হয়। বিশ্লেষকদের মতে এই জ্যামের সমস্যা দূর করতে মেট্রোরেল অনেক বেশি সাহায্য করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্যামের সমস্যা কমিয়ে আনার জন্য মেট্রোরেল ব্যবহার করা হয়। ঢাকা তে অনেক বেশি যানজট এর জন্য এই মেট্রোরেল এর স্থাপন করা হয়েছে। ২০১২ সালে আমাদের দেশের সরকার এই মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যেগ নিয়েছিল।
এটি নির্মাণ করা ছিল আমাদের কাছে অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু তবুও আমাদের দেশের সরকার এটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে ঢাকা শহরে কিছুটা হলেও যানজটের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
যানজটের মুক্তির পাশাপাশি আমাদের দেশের জিডিপি এবং অর্থনীতিতেও অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে মেট্রোরেল। ঢাকা শহরের মানুষের কাছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খুব সহজে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ও প্রথম পছন্দ হলো মেট্রোরেল।

মেট্রোরেল কি

মেট্রোরেল হলো বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনেক সুবিধাজনক, সময় সাশ্রয়ী, দ্রুতগামী এক ধরনের যানবাহন। এটি বিদ্যুৎ এর সাহায্যে পরিচালিত হয়ে থাকে। ঢাকা মেট্রোরেল যে সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয় তাকে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রান্সপোর্ট বলা হয়। যাকে সংক্ষেপে MRT নামেও উল্লেখ করা হয়।

মেট্রোরেল প্রকল্প

২০১২ সালে আমাদের দেশের সরকার যখন দেখলো আমাদের কেন্দ্রীয় বিভাগ ঢাকাতে অনেক বেশি পরিমানে যানজটের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, ঠিক তখনই এই মেট্রোরেল বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকে কাজ শুরু হয়।
ঢাকা শহরে মোট ৬টি মেট্রোরেল স্থাপনের কথা উল্লেখ আছে। মেট্রোরেল এর কাজ আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলবে বলে আশা করা যায়। এই ৬টি মেট্রোরেল এর মোট দৈর্ঘ্য হওয়ার কথা আছে ১২৮.৭৪১ কিলোমিটার। উড়াল এর ক্ষেত্রে ৬৭ কিলোমিটার এর মত প্রায়।
পাতাল এর ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ৬১ কিলোমিটার এর মত প্রায়। এই মেট্রোরেল এ মোট ১০৪ টি স্টেশন গঠন করা হবে। যার পরিকল্পনা সরকার ২০৩০ সাল এর মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

মেট্রোরেল বাস্তবায়ন

বাংলাদেশে স্থাপিত প্রথম মেট্রোরেল হলো এম আর টি লাইন-৬। এটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই লাইন তৈরি তে ব্যয় হয়েছে মোট ২২ হাজার কোটি টাকা। লাইনটি মতিঝিল থেকে শুরু করে উত্তরা পর্যন্ত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এই লাইনটির মোট কাজ সাধিত হয়েছে প্রায় ৮৬% এর মত। এই কাজের মধ্যে জাইকা প্রকল্প বিদ্যমান ছিল। এই প্রকল্পে মোট ৮৫% কাজ সাধিত হবে। যার জন্য ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার মত। মতিঝিল থেকে শুরু করে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল এর কাজ হবে প্রায় ১ কিলোমিটার এর মত।
এই কাজে ব্যয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার মত। ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাজ শেষ করার কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাও পর্যন্ত আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী যাত্রী চলাচলের জন্য এই অংশটুকু খুলে দেয়া হয়।
২০২৩ সালে আগারগাও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সর্বশেষে ২০২৪ সালে আগারগাও থেকে কমলাপুর পর্যন্ত কাজ শেষ করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

অর্থনীতি এবং যাতায়াতে মেট্রোরেল

ঢাকা শহর অনেক জনবহুল একটা শহর। যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষকে জ্যামের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকা পরিবহন সংস্থা মেট্রোরেল স্থাপনের উদ্যেগ নিয়েছিল। এই উদ্যেগে বাংলাদেশ সরকার এবং জাইকার অর্থ প্রদানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
মেট্রোরেল ঢাকা শহরের যানজট কমানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক বেশি সাহায্য করছে। বাংলাদেশের জিডিপি বাড়াতে মেট্রোরেল অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়া ঢাকা শহরের মানুষ স্বস্তিতে এবং নিরাপদে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে বলে আশা করা যায়। শিশু, তরুন, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী সবাই এই সুবিধা গ্রহন করতে পারবে। মেট্রোরেল এর ব্যবহারের কারনে ঢাকা শহর অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর প্রানোচ্ছল হবে বলে আশা করা যায়।

মেট্রোরেলের গুরুত্ব

ঢাকা শহর যেহেতু অনেক বেশি জনবহুল এবং এখানে অনেক বেশি যানজটের সমস্যা লেগে থাকে। ঢাকা শহরে প্রায় দুই লাখের বেশি যানবাহন রয়েছে। যার কারনে আমরা কোথাও বের হলে বা আমাদের গন্তব্যস্থানে যেতে অনেক সময় লেগে যায়।
যার কারনে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মেট্রোরেলের উৎপত্তি হয়েছে। অনেক সময় যানজট, হরতাল এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর জন্য আমাদের আরোও বেশি সমস্যা হয়ে থাকে। মেট্রোরেল ব্যবহার করে এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

মেট্রোরেলের সুযোগ এবং সুবিধা

মেট্রোরেলের অনেক বেশি বেনিফিট রয়েছে। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক বেশি কাজে দেয়। আমাদের কোথাও যাওয়ার কাজকে সহজ করে দিয়েছে। এখন চলুন জেনে নেই মেট্রোরেলের আরও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে।
  • মুল সড়কের মাঝখান তৈরি হবে এক ধরনের সড়ক। যার নাম দেয়া হয়েছে উড়াল সড়ক। এই সড়কের ওপরে থাকবে রেললাইন। যেখান দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। যার ফলে যানজটের সমস্যা হবে না।
  • মেট্রোরেল অনেক দীর্ঘ হওয়ার কারনে কোনো সমস্যা ছাড়াই আমরা ২০ কিলোমিটার রাস্তা খুব সহজে পাড়ি দিতে পারবো।
  • মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনের ক্ষেত্রে ৬টি বগি থাকবে। যেখানে যাত্রীদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে যাত্রীদের সুবিধা দেওয়া হবে।
  • প্রায় ১৪টি ট্রেন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলবে। প্রতিটি ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা হবে প্রায় ৯৪২ জন। এর সাথে ৭৫৪ জন যাত্রীও যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু তাদের যাতায়াতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। ৪ মিনিট ছেড়ে ছেড়ে এই ট্রেন চলার কথা উল্লেখ আছে। মেট্রোরেলের গতি হবে ঘন্টায় ৩২ কিলোমিটার এর মত। প্রতিটি স্টেশনে ৩০ সেকেন্ড এর মত অবস্থান করবে।
  • মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ কিলোমিটার এর জন্য ভাড়ার পরিমান নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। এই ভাড়া কার্ড এর মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।

উপসংহার

বাংলাদেশের রোল মডেল হিসেবে এখন রয়েছে মেট্রোরেল। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দিককে শক্তিশালী করতে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। একটি সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা থেকে প্রায় ১৭০০ মানুষ বসবাস করার জন্য এই ঢাকা শহরে এসে থাকে।
অন্যদিকে ঢাকা শহর অনেক জনবহুল একটি জায়গা। যার কারনে সেখানে মেট্রোরেলের মত প্রকল্পের অনেক দরকার ছিল। মেট্রোরেল হওয়াতে প্রায় ১৮০০ মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খুব সহজে যাতায়াত করতে পারছে।
ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে অনেকে এই মেট্রোরেল ব্যবহার করে থাকে। অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি জায়গায় খুব সহজেই যাওয়া সম্ভব হচ্ছে মেট্রোরেলের কারনে। আমাদের অর্থনীতিতেও এর গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়।

লেখকের মন্তব্য

আজকের পোস্ট আমরা মেট্রোরেল রচনা সম্পর্কে জানলাম। যদি এই রচনা আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আমরা এই ধরনের পোস্ট আপনাদের উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করে থাকি। এই ধরনের পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন এবং সবসময় আপডেট থাকুন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply