ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে | ১০ টি খাবার আপনার ডেঙ্গু জ্বর কমাবে

✌✌What to eat if you have dengue fever

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে, পুষ্টির ঘাটতি পূরণ এবং দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরও কি কি করলে আপনার ডেঙ্গু জর ভাল হবে আজকে সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো । তাই পোস্ট টি পুরো পড়ুন মন দিয়ে ।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশিকা অনুসরণ করা উচিত:

১) পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান: ডেঙ্গুতে পানিশূন্যতা একটি বড় সমস্যা হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, তরল খাবার, নারকেলের জল, ইলেক্ট্রোলাইটযুক্ত পানীয়, ORS (Oral Rehydration Solution) পান করুন। প্রতিদিন 3-4 লিটার তরল পান করার চেষ্টা করুন।

২) হালকা খাবার: পেটে ভার না করে এমন হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খান।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশিকা অনুসরণ করা উচিত

কিছু ভালো বিকল্প:

  • ভাত: সাদা ভাত বা খিচুড়ি
  • রুটি: তন্দুর রুটি বা পরোটা
  • স্যুপ: মুরগির স্যুপ, মাছের ঝোল, শাকসবজি স্যুপ
  • ডাল: মসুর ডাল, মুগ ডাল, মুসুর ডাল
  • মাছ: রুই, কাতলা, ইলিশ (ঝাল কম করে রান্না করুন)
  • মুরগি: মুরগির স্যুপ, মুরগির ভুনা
  • ডিম: সেদ্ধ ডিম, ডিমের ঝোল
  • ফল: পেঁপে, কলা, আপেল, নাশপাতি (বীজ ছাড়িয়ে)
  • শাকসবজি: পালং শাক, লাউ শাক, শসা, ঢেঁড়স

৩) প্রোটিন: পেশী সংস্থানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু ভালো উৎস:

  • ডিম
  • মাছ
  • মুরগি
  • ডাল
  • ছোলা
  • বাদাম
  • দই

৪) ভিটামিন ও খনিজ: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন A, C এবং E, এবং খনিজ যেমন জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান।

কিছু ভালো উৎস:

  • ফল: পেঁপে, কলা, আপেল, নাশপাতি, লেবু
  • শাকসবজি: পালং শাক, লাউ শাক, গাজর, বীট
  • বাদাম: কাজু, বাদাম, পেস্তা

৫) খাবার এড়িয়ে চলুন:

  • তেলযুক্ত খাবার: ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড
  • ঝাল খাবার: এতে পেট খারাপের সমস্যা বাড়তে পারে
  • চর্বিযুক্ত খাবার: রেড মিট, মাখন, পনির
  • ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: চা, কফি, কোলা
  • মদ্যপান: এটি ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে তুলতে পারে

৬) নিয়মিত খাবার: দিনে 5-6 বার অল্প অল্প করে খাবার খান। বেশি বেশি সময় না খেয়ে থাকবেন না।

৭) বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং শরীরকে সুস্থ হওয়ার সময় দিন।

✌✌আরও পড়ুনঃ হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার | Foods harmful to the heart

ডেঙ্গু জ্বর কত দিনে ভালো হয়?

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত 3 থেকে 7 দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এটি 10 থেকে 14 দিন পর্যন্তও টিকে থাকতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি প্রধান পর্যায় রয়েছে:

  • জ্বরের পর্যায়: এটি প্রথম 3-5 দিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে, রোগীর জ্বর 104°F (40°C) পর্যন্ত উঠতে পারে, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, গাঁটব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
  • সুস্থতার পর্যায়: জ্বর কমে গেলে এবং উপসর্গগুলি উন্নত হলে এই পর্যায় শুরু হয়। এটি 2-3 দিন স্থায়ী হতে পারে।
  • পুনরুদ্ধারের পর্যায়: এই পর্যায়ে, রোগী ধীরে ধীরে শক্তি পুনরুদ্ধার করে। এটি কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারে।

কিছু বিষয় মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:

  • ডেঙ্গু জ্বরের কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। চিকিৎসা লক্ষণগুলি উপশম করার এবং জটিলতা এড়ানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল পান এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • জ্বর কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে অ্যাসিটামিনোফেন বা প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায় এমন ওষুধ, যেমন অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন এড়িয়ে চলুন।
  • যদি রোগীর জ্বর না কমে, রক্তপাত হয়, বা অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয় তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, আপনি নিম্নলিখিত সংস্থানগুলি দেখতে পারেন:

 

ডেঙ্গু রোগী কি দুধ খেতে পারবে?

ডেঙ্গু রোগী কি দুধ খেতে পারবে?

হ্যাঁ, ডেঙ্গু রোগীরা দুধ খেতে পারেন। আসলে, দুধ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি ভালো খাবার হতে পারে কারণ এটি:

  • প্রোটিন সমৃদ্ধ: দুধ পেশী সংস্থান এবং শরীরের মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের একটি ভালো উৎস।
  • ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D সমৃদ্ধ: দুধ হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D এর একটি ভালো উৎস।
  • হজমে সহজ: দুধ হজমে সহজ এবং পেটে ভার সৃষ্টি করে না, যা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যাদের পেট খারাপের সমস্যা হতে পারে।
  • তরল পান: দুধ তরল পানের একটি ভালো উৎস, যা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা প্রায়শই পানিশূন্যতায় ভোগে।

তবে, কিছু বিষয় মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:

  • পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধ এড়িয়ে চলুন: পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধ হজমে ভারী হতে পারে এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। পরিবর্তে, কম চর্বিযুক্ত বা চর্বিমুক্ত দুধ পান করুন।
  • দুধ সহ্যশীলতা পরীক্ষা করুন: কিছু লোকের দুধে অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা থাকে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আগে আপনি যদি দুধ খেতে না পারেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন যে আপনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় দুধ খেতে পারবেন কিনা।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে এড়িয়ে চলুন: দুধ একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও, অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। প্রতিদিন 2-3 গ্লাস দুধ পর্যাপ্ত।

✌✌আরও পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়

ডেঙ্গু জ্বরের তাপমাত্রা কত?

ডেঙ্গু জ্বরে তাপমাত্রা সাধারণত 100.4°F (38°C) থেকে 104°F (40°C) এর মধ্যে থাকে। তবে, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এটি 105°F (40.6°C) বা তার বেশি পর্যন্তও উঠতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের তাপমাত্রার ধাপ:

  • প্রথম 2-3 দিন: জ্বর সাধারণত 102°F (39°C) থেকে 104°F (40°C) এর মধ্যে থাকে।
  • তৃতীয় দিন: জ্বর কমতে শুরু করতে পারে।
  • চতুর্থ থেকে সপ্তম দিন: জ্বর সাধারণত স্বাভাবিকে ফিরে আসে।

মনে রাখবেন:

  • উচ্চ তাপমাত্রা ডেঙ্গু জ্বরের একটি সাধারণ লক্ষণ।
  • তাপমাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এবং জ্বর কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  • উচ্চ তাপমাত্রা (103°F (39.4°C) বা তার বেশি) দীর্ঘক্ষণ ধরে স্থায়ী হলে বা অন্যান্য লক্ষণগুলির সাথে থাকে, যেমন তীব্র মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি রক্তপাত, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।

ডেঙ্গু জ্বরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য কিছু টিপস:

  • প্যারাসিটামল বা অ্যাসিটামিনোফেন (যেমন, মোলবিন, প্যানাডোল)
  • আয়বুপ্রোফেন (যেমন, ব্রুফেন) – তবে, শুধুমাত্র 12 বছর বা তার বেশি বয়সী রোগীদের জন্য এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
  • প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন: পানি, ORS (Oral Rehydration Solution), তরল খাবার।
  • ঠান্ডা সেঁক: কপালে ঠান্ডা সেঁক দিন।
  • হালকা পোশাক পরুন: পাতলা, সুতির পোশাক পরুন যাতে ঘাম ঝরে বেরিয়ে যেতে পারে।
  • আপনার ঘর ঠান্ডা রাখুন: এয়ার কন্ডিশনার বা পাখা ব্যবহার করুন।
  • বিশ্রাম নিন: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

মনে রাখবেন:

    • ডেঙ্গু জ্বরের কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই।
    • চিকিৎসা লক্ষণগুলি উপশম করার এবং জটিলতা এড়ানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
  • আপনার যদি উচ্চ তাপমাত্রা, তীব্র মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি রক্তপাত হতে থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করুন।

 

ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়

প্রথম পদক্ষেপ:

  • ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন: ডেঙ্গু জ্বর নিশ্চিত করার জন্য এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • বিশ্রাম নিন: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং শরীরকে সুস্থ হওয়ার সময় দিন।
  • প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন: ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ORS (Oral Rehydration Solution), তরল খাবার পান করুন।
  • হালকা খাবার খান: হজমে সহজ এমন হালকা ও সুষম খাবার খান।

ঔষধ:

  • জ্বর কমাতে: প্যারাসিটামল বা অ্যাসিটামিনোফেন (যেমন, মোলবিন, প্যানাডোল) ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন: 
  • 12 বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা উচিত নয়। 
  • আপনার যদি লিভার বা কিডনি রোগ থাকে, তাহলে অ্যাসিটামিনোফেন ব্যবহারের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। 

লক্ষণ পর্যবেক্ষণ:

  • নিজের শরীরের অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং নতুন বা খারাপ লক্ষণগুলির জন্য সতর্ক থাকুন।
  • উচ্চ তাপমাত্রা, তীব্র মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি রক্তপাত, রক্তপাতের ঘটনা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন:

  • মশা থেকে সুরক্ষা: মশা তাড়ানোর জন্য মশা repellent ব্যবহার করুন, মশারি ব্যবহার করুন এবং মশা প্রজননের উৎস দূর করুন।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন এবং জমে থাকা পানি দূর করুন।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি: ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন এবং নিজেদের ও অন্যদের সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

মনে রাখবেন:

  • ডেঙ্গু জ্বর একটি গুরুতর অসুস্থতা হতে পারে।
  • তাই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে কিছু অতিরিক্ত তথ্যের উৎস রয়েছে:

 

শেষ কথা,

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে আজকের এই তথ্যটি যদি আপনদের ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

4 thoughts on “ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে | ১০ টি খাবার আপনার ডেঙ্গু জ্বর কমাবে”

Leave a Reply