পিরিয়ডের কতদিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হয় । ১০ টি অজানা তথ্য

পিরিয়ডের কতদিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর, যেমন:

  • মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য: মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য সকলের একই রকম হয় না। যাদের নিয়মিত ২৮ দিনের চক্র থাকে, তাদের জন্য পিরিয়ডের ১১ থেকে ১৪ দিন পর গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
  • ডিম্বস্ফোটন: ডিম্বস্ফোটন হল সেই সময় যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হয়। ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সার দেওয়ার জন্য বেঁচে থাকে।
  • শুক্রাণুর জীবনকাল: শুক্রাণু নারীর শরীরে ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

সাধারণত, পিরিয়ডের ৬ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সহবাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তবে, মনে রাখবেন এটি শুধুমাত্র একটি অনুমান। প্রতিটি নারীর শরীর আলাদা এবং ডিম্বস্ফোটন প্রতি মাসে ভিন্ন সময়ে হতে পারে।

গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন

গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন:

  • আপনার মাসিক চক্র ট্র্যাক করুন: এটি আপনাকে আপনার ডিম্বস্ফোটনের সময় অনুমান করতে সাহায্য করবে।
  • ডিম্বস্ফোটন পরীক্ষার কিট ব্যবহার করুন: এই কিটগুলি আপনার মূত্রে লুটেইনাইজিং হরমোনের (এলএইচ) মাত্রা পরিমাপ করে, যা ডিম্বস্ফোটনের আগে বৃদ্ধি পায়।
  • গর্ভधारणের সময় সহবাস করুন: ডিম্বস্ফোটনের আগে, সময় এবং ডিম্বস্ফোটনের পর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সহবাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আপনার যদি গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করছেন তবে একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কথা বলুন। তারা আপনাকে আরও নির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে পারবেন এবং আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে তা উত্তর দিতে পারবেন।

কিছু অতিরিক্ত তথ্য:

  • ডিম্বস্ফোটনের কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন যোনি ترشحات বৃদ্ধি, যোনি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি এবং শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
  • অনেকগুলি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গর্ভধারনকে রোধ করতে কার্যকর।
  • গর্ভধারন পর পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস কোনটি

পিরিয়ড বলতে কি বোঝায়?

পিরিয়ড: নারী শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া

পিরিয়ড (ঋতুস্রাব) হল নারী শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা প্রতি মাসে ঘটে। এতে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ স্তর (এন্ডোমেট্রিয়াম) রক্ত, কোষ এবং টিস্যুর সাথে খসে পড়ে, যদি গর্ভধারণ না হয়।

পিরিয়ডের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • রক্তপাত: যোনিপথ দিয়ে রক্ত, টিস্যু এবং কোষের খসে পড়া। রক্তপাতের পরিমাণ হালকা থেকে ভারী হতে পারে এবং এটি ৩ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হতে পারে।
  • পেটে ব্যথা: পেটের নীচের অংশে ব্যথা, যা ক্র্যাম্পিং বা টানানোর মতো হতে পারে।
  • মেজাজের পরিবর্তন: বিরক্তি, চটপটে মেজাজ বা বিষণ্ণতা।
  • শরীরের ব্যথা: মাথাব্যথা, পিঠ ব্যথা বা পায়ের ব্যথা।
  • ক্ষুধা পরিবর্তন: বেশি বা কম ক্ষুধা পাওয়া।
  • শ্লথতা: ক্লান্তি বা শক্তির অভাব।
  • ব্রণ: মুখে ব্রণ বা ত্বকের সমস্যা।

পিরিয়ডের সময়কাল সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিন হয়। যাইহোক, কিছু নারীর জন্য এটি ১৮ দিন পর্যন্ত ছোট বা ৪৫ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।

পিরিয়ড সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • পিরিয়ড কোন রোগ নয়। এটি নারী শরীরের একটি স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর অংশ।
  • পিরিয়ডের সময় সক্রিয় থাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ। আপনি আপনার রুটিন অনুসরণ করতে পারেন এবং আপনার পছন্দের কাজগুলি করতে পারেন।
  • পিরিয়ডের সময় নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি লক্ষণগুলি উপশম করতে এবং আপনাকে আরও ভাল বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • যদি আপনার পিরিয়ডের সাথে তীব্র ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত বা অন্যান্য সমস্যা হয়, তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

 

পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার উপায়:

পিরিয়ড নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। তবে, অনেক নারীর জন্য এটি বিভিন্ন অস্বস্তি ও সমস্যার কারণ হতে পারে।

পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন:

পুষ্টি:

  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান: প্রচুর ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং লিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
  • আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান: আয়রন রক্তশূন্যতা রোধে সাহায্য করে এবং ক্যালসিয়াম মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • জল পান করুন: প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন যাতে আপনি ডিহাইড্রেটেড না হন।
  • ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং চিনিযুক্ত পানীয় সীমিত করুন: এগুলি মাসিকের ব্যথা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ব্যায়াম:

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম মাসিকের ব্যথা কমাতে এবং আপনার মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
  • হালকা ব্যায়ামের উপর মনোযোগ দিন: যেমন হাঁটা, জগিং, সাঁতার কাটা বা যোগব্যায়াম।

বিশ্রাম:

  • প্রচুর বিশ্রাম নিন: পিরিয়ডের সময় আপনার শরীরের অতিরিক্ত বিশ্রামের প্রয়োজন হতে পারে।
  • পর্যাপ্ত ঘুমান: প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।

ব্যথা উপশম:

  • ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) ব্যথানাশক ব্যবহার করুন: যেমন আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • গরম জলের ব্যাগ ব্যবহার করুন: পেটের নীচের অংশে গরম জলের ব্যাগ ব্যবহার করা ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ম্যাসেজ করুন: পেটের নীচের অংশে হালকা ম্যাসেজ ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।

স্বাস্থ্যবিধি:

  • নিয়মিত নোংরা প্যাড বা ট্যাম্পন পরিবর্তন করুন: প্রতি ৪-৬ ঘন্টা অন্তর নোংরা প্যাড বা ট্যাম্পন পরিবর্তন করুন।
  • হাত পরিষ্কার রাখুন: প্যাড বা ট্যাম্পন পরিবর্তন করার আগে এবং পরে আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • যোনির স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন: সাবান এবং গরম জল দিয়ে যোনি পরিষ্কার করুন, ডouching এড়িয়ে চলুন।

অন্যান্য টিপস:

  • আপনার পিরিয়ডের ট্র্যাক রাখুন: এটি আপনার ডাক্তারকে আপনার চক্র সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে

আরও পড়ুনঃ payra thermal power plant – পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

পিরিয়ড সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের বিধান:

পিরিয়ড নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ইসলামে, পিরিয়ডকে “হায়েজ” (حيض) বলা হয়। কুরআন ও হাদিসে পিরিয়ড সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশিকা ও বিধান রয়েছে।

কুরআনে:

  • সূরা বাকারা (২):২২২ এ বলা হয়েছে, “এবং তারা তোমাকে ঋতু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো, তা একটি অপবিত্রতা। সুতরাং ঋতুকালে নারীদের থেকে দূরে থাকো এবং যতক্ষণ না তারা পবিত্র না হয় ততক্ষণ তাদের স্পর্শ করো না।”
  • সূরা আন-নিসা (৪):৩৪ এ বলা হয়েছে, “এবং ঋতুকালীন নারীদের সাথে সহবাস করো না এবং যতক্ষণ না তারা পবিত্র না হয় ততক্ষণ তাদের থেকে দূরে থাকো।”

হাদিসে:

  • বুখারী ও মুসলিমের একটি হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যখন একজন নারী ঋতুবতী হয়, তখন সে তার নামাজ, রোজা, তাওয়াফ এবং কোরআন তেলাওয়াত থেকে বিরত থাকে।”
  • আবু দাউদের একটি হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “ঋতুবতী নারীর জন্য কোনো জিহাদ নেই, কোনো রোজা নেই, কোনো তাওয়াফ নেই এবং কোরআন তেলাওয়াত নেই।”

কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিকা অনুসারে, পিরিয়ডের সময় নারীদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলি থেকে বিরত থাকতে হয়:

  • নামাজ: ঋতুবতী নারীদের নামাজ আদায় করা যায় না। তবে, তারা যখন ঋতু থেকে পবিত্র হয়ে যান তখন তাদের কাটা নামাজগুলো পূরণ করতে হবে।
  • রোজা: ঋতুবতী নারীদের রোজা রাখা যায় না। তবে, তারা যখন ঋতু থেকে পবিত্র হয়ে যান তখন তাদের কাটা রোজাগুলো পূরণ করতে হবে।
  • তাওয়াফ: ঋতুবতী নারীদের হজের সময় তাওয়াফ করা যায় না। তবে, তারা যখন ঋতু থেকে পবিত্র হয়ে যান তখন তাওয়াফ করতে পারবেন।
  • কোরআন তেলাওয়াত: ঋতুবতী নারীদের কোরআন স্পর্শ করা বা তেলাওয়াত করা যায় না। তবে, তারা যখন ঋতু থেকে পবিত্র হয়ে যান তখন কোরআন স্পর্শ করতে এবং তেলাওয়াত করতে পারবেন।
  • সহবাস: ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করা যায় না।

পিরিয়ডের সময় নারীদের জন্য কিছু বিধানও রয়েছে:

  • নিয়মিত নোংরা প্যাড বা ট্যাম্পন পরিবর্তন করা: প্রতি ৪-৬ ঘন্টা অন্তর নোংরা প্যাড বা ট্যাম্পন পরিবর্তন করতে হবে।
  • হাত পরিষ্কার রাখা: প্যাড বা ট্যাম্পন পরিবর্তন করার আগে এবং পরে আপনার হাত ভাল সাবান অথবা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। 

 

Reference, 

পিরিয়ড সম্পর্কে আরও জানতে, আপনি নিম্নলিখিত সংস্থানগুলি দেখতে পারেন:

শেষ কথা,

আমি আশা করি এই তথ্যগুলি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে যারা বিশেষ করে USA  বাঙালিরা আছেন তারা এই প্রশ্ন গুলি করে থাকেন বা তাদের মনে এই প্রশ্নটি হয় সো,  তাদের জন্য বিষয় আজকে বৈজ্ঞানিক ও ইসলামিক বিধান অনুযায়ী লিখলাম।