মূল্যবোধের ধারণা | মূল্যবোধ কি? এর বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা

 
মূল্যবোধের ধারণামূল্যবোধের ধারণা(Concept of Values of social work)

মূল্যবোধের ধারণা, মূল্যবোধ একটি বিমূর্ত ধারণা। সাধারণত মূল্যবোধ হলো একটি আদর্শ মানদণ্ড যার ভিত্তিতে মানুষের আচার-আচরণের ভালো-মন্দ বিচার করা হয়। মূল্যবোধই ব্যক্তিকে তার পেশাগত ও সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে পথনির্দেশনা দান করে। প্রতিটি পেশাতেই মূল্যবোধের উপস্থিতি বিদ্যমান। সমাজকর্ম পেশাতেও মূল্যবোধের উপস্থিতি রয়েছে; যা সমাজকর্ম পেশাকে পরিচালনা এবং এ পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাধারণভাবে, মূল্যবোধ ধারণাটি ব্যাপক যা বহুরকম ও জটিল অর্থবোধক এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। মূলত মানবীয় চাহিদা, স্বীকৃতি, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদির মাঝেই মূল্যবোধের পরিচয় বিধৃত।

মিল্টন রকইচ (Milton Rokeach) মূল্যবোধের ধারণায় বলেন, ‘কীভাবে আচরণ করা উচিত কিংবা অনুচিত, কোনো বাস্তব অবস্থার মূল্য আরোপ করা বা না করা ইত্যাদি সম্পর্কে কারও সামগ্রিক বিশ্বাসের মধ্যে মুখ্যভাবে অন্তর্গত এক ধরনের বিশ্বাস।'”

মূল্যবোধ সম্পর্কে আরমান্ডো মরেলস ও বি ডব্লিউ শেফার বলেন, ‘মূল্যবোধ কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নয় বরং লক্ষ্য নির্ণয়ের মানদণ্ড।’ (Values are not the concrete goals of action, but rather the criteria by which goals are chosen)”

ডরোথি লি (Dorthy Lee) মূল্যবোধের ধারণায় বলেন, ‘মানবীয় মূল্যবোধ বা মূল্যবোধ ব্যবস্থা বলতে কোনো ব্যক্তির তুলনামূলক পছন্দ, ভালো- মন্দের বিচারবোধ, সঠিক-ভুল সম্পর্কিত ভিত্তিকে বোঝায়। তাই মূল্যবোধ সম্পর্কে আমরা বলতে পারি; কিন্তু তা নির্দিষ্ট করে জানতে পারি না।’

আরও কিছু সংজ্ঞা,

নিকোলাস রেসার মূল্যবোধ সম্পর্কে বলেছেন, ‘মূল্যবোধ হচ্ছে সে সকল গুণাবলি যা ব্যক্তি নিজের সহকর্মীদের মধ্যে দেখে আনন্দিত হন এবং নিজস্ব জাতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিবেশের পক্ষে মূল্যবান মনে করে খুশি হন।’

আর টি শেফার বলেন, ‘ভালো বা মন্দ, কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ঠিক বা বেঠিক সম্পর্কে সমাজে বিদ্যমান ধারণার নামই মূল্যবোধ।’

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মূল্যবোধ হলো এমন একটি ধারণা, বিশ্বাস ও আদর্শ যার দ্বারা মানুষের সকল আচার-আচরণের ভালো-মন্দ ও যথার্থতা নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ বলা যায় যে, মানুষের আচার-আচরণের আদর্শ মান বা মানদণ্ডই হচ্ছে মূল্যবোধ।

মূল্যবোধের ধরন (Types of Values) 

 

মূল্যবোধের ধরন (Types of Values) 

মূল্যবোধ হলো বিশ্বাসের অন্তনিধিত মূল্য। ব্যক্তি, সমাজ ও মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম চালিকাশক্তি হলো মূল্যবোধ। মূল্যবোধের ধরন বহুমাত্রিক অর্থাৎ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যবোধকে বিভিন্নভাবে নির্ণয় করা যায়। সার্বিকভাবে মূল্যবোধের ধরনগুলো নিম্নরূপ-

১. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মূল্যবোধ (Individualistic values): ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মূল্যবোধ এমন একটি সহজাত মূল্যবোধ যেখানে। ব্যক্তি পৃথিবীর অন্য সবকিছু থেকে নিজের ব্যক্তি সভাকে অধিক প্রাধান্য দেয়। এটি সবচেয়ে প্রাকৃতিক মূল্যবোধও বটে যা প্রতিটি প্রাণীর মাঝে সহজাতভাবে বিদ্যমান। বর্তমান বিশ্ব ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মূল্যবোধের প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়েছে। এ অনুসারে ব্যক্তি নিজের মূল্যবোধকে সর্বাধিক সঠিক মনে করে এবং অন্য সবকিছু থেকে এটিকে রক্ষায় প্রাধান্য দেয়। অনেক সময় এ মূল্যবোধকে ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবেও সমর্থন করা হয় এ হিসেবে যে, প্রত্যেকেরই তার নিজের জন্য যেটি ভালো তা বিবেচনা করার অধিকার আছে। প্রত্যেকটি শিশু ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মূল্যবোধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সে সবকিছু তার নিজের জন্য চায় এবং চায় সবাই যেন তার পাশে থাকুক। যখন তা পূরণ না হয় সে কেঁদে উঠে এবং তা পূরণে সম্ভাব্য সবকিছু করে।

পারিবারিক মূল্যবোধ (Family values)

২/ পারিবারিক মূল্যবোধ (Family values): এ কথা সত্য যে, মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী আবার সবচেয়ে দুর্বল প্রাণীও বটে। একটি মানবশিশু সবচেয়ে অসহায়। যদি তাকে সমাজে একা বেঁচে থাকতে হয় তা প্রায় অসম্ভব। তার বেঁচে থাকা এবং বেড়ে উঠার জন্য পরিবারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পরিবারের এ ধারণা থেকেই মূলত পারিবারিক মূল্যবোধের সৃষ্টি। একমাত্র পরিবারই তার সদস্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কেননা পরিবার ব্যবস্থায় এর প্রত্যেক সদস্য ভালোবাসা ও বিশ্বাসের একটি অলিখিত বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। পারিবারিক বিষয়ের এই মূল্যবোধ পুরোটাই ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। যখন পারিবারিক মূল্যবোধ দৃঢ় বা শক্তিশালী হয় তখন ব্যক্তিস্বাধীনতা বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মূল্যবোধের শক্তিগুলো হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রথমে তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে চিন্তা করতে হয় এবং পরে নিজের। তাই অনেকসময় এ মূল্যবোধ ব্যক্তিকে একটি আলাদা সত্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশে বাধা প্রদান করে থাকে।

৩ পেশাগত মূল্যবোধ (Professional values)

পেশাগত মূল্যবোধ (Professional values): সমাজ শুধুমাত্র পরিবার গঠনের জন্য সৃষ্টি হয় না বরং প্রকৃতিগতভাবে পরিবার সমাজের একটি সুনির্দিষ্ট উপকরণ হিসেবে এর সদস্যদের প্রয়োজন ও প্রত্যাশাকে পূরণ করে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যা বিভিন্ন বিভাগ বা সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে গঠিত হয়; যার মধ্যে পুলিশ, আইন, রাজস্ব, প্রতিরক্ষা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ সকল সংস্থাগুলো রাষ্ট্রকে একটি সাধারণ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ও বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলোও কর্মী উৎপাদন ও সেবার সাথে জড়িত।

এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তিই কোনো না কোনো সংস্থায় যুক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য পেশাগত কর্মে লিপ্ত থাকে। সমাজ বা রাষ্ট্রে এ সকল সংস্থাগুলো যার যার ভূমিকায় নিয়োজিত, যেখানে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় কর্মীদেরকে কিছু বিশেষ মূল্যবোধ ধারণ করতে হয়। ব্যক্তি তার পেশার আলোকেই এ মূল্যবোধের অনুশীলন ও উন্নয়ন ঘটাতে পারে। সংস্থাভেদে এ মূল্যবোধের মধ্যে ভিন্নতা বিদ্যমান। যেমন- একজন পুলিশ অফিসারের সাথে একজন আইনজীবী বা সমাজকর্মীর মুল্যবোধ কখনই এক হবে না। তাই প্রতিটি পেশায় স্বতন্ত্র কিছু মূল্যবোধ বিদ্যমান যা অন্য পেশা হতে পৃথক। এ পেশাগত মূল্যবোধ পেশাদার কর্মীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত আচরণে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

Concept of ValuesConcept of Valuesআরও পড়ুনঃ শিল্প বিপ্লব কি? শিল্প বিপ্লব কত সালে সংঘটিত হয় (Industrial Revolution)

মানুষের সৃষ্ট মূল্যবোধগুলোই মূলত পৃথিবীতে দ্বন্দ্ব সংঘাতের জন্য দায়ী।

৪. জাতীয় মূল্যবোধ (National values): এ পৃথিবী বহু দেশ বা রাষ্ট্রে বিভক্ত এবং প্রতিটি দেশই স্বাধীন ও সার্বভৌম। তথাপি অর্থনীতির বিশ্বায়নে দেশগুলো একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তি ও পরিবার আলাদা সত্তা হলেও যেমন একে অপরের পরিপূরক তেমনি রাষ্ট্রগুলোও আলাদা সত্তা হিসেবে পরিপূরকের ভূমিকায় বিভিন্ন চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণে এক অপরের ওপর নির্ভরশীল। যেকোনো রাষ্ট্রের উন্নত ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য এর নাগরিকদের প্রয়োজন বিশেষ কিছু মূল্যবোধ ধারণ করা; যা একটি পরিবারের মূল্যবোধের মতোই সুসংগঠিত। এ মূল্যবোধগুলোই একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতাকে প্রতিফলিত করে। যেমন- চীন বা ইন্ডিয়ার জাতীয় মূল্যবোধগুলো হাজার বছরের পুরোনো; অন্যদিকে আমেরিকা, ইসরায়েল, অস্ট্রেলিয়া বা পাকিস্তানের মূল্যবোধগুলো অপেক্ষাকৃত নতুন। এ ধরনের মূল্যবোধ প্রায়শই রাষ্ট্রের নিজস্ব নিয়ম বা আইনের দ্বারা সংরক্ষিত থাকে, যেখানে নাগরিকদের জন্য রয়েছে সমতা ও ন্যায়বিচার। দেশভেদে এ মূল্যবোধে পার্থক্যের বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়।

অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় মূল্যবোধগুলোর বিরুদ্ধাচরণ অপরাধমূলক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই যে সকল রাষ্ট্রের জাতীয় মূল্যবোধগুলো শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেখানে ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থ বৃহৎ বিবেচনা করা হয় এবং এগুলোর প্রয়োগে আইনের ব্যবহার কম হয়।

নৈতিক মূল্যবোধ (Morals values):

৫. নৈতিক মূল্যবোধ (Morals values): যে রাষ্ট্র বা সমাজের মূল্যবোধ আইনের দ্বারা সংরক্ষিত বা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে সে রাষ্ট্র বা সমাজের কার্যাবলিগুলো সুন্দরভাবে সংঘটিত হয় না। সেটিই আদর্শ রাষ্ট্র যেখানে জনগণের ওপর এর প্রয়োগ সীমিত। রাষ্ট্রের আইনগুলো মূলত ক্ষমতাবানদের তৈরি এবং তাদের স্বার্থের অনুকূলে করা হয়। প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তা সমাজের ক্ষমতাবানদের অনুকূলে যায় এবং অধিকাংশ জনগনই এর শিকার হয়ে দরিদ্র ও নিঃস্ব হয়। সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও আইনের অপ-অনুশীলন অসমতা ও অবিচারের জন্ম দেয়। নৈতিক মূল্যবোধগুলো সাধারণত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অতিবাহিত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- পশ্চিমা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ থাকলেও বিবাহের পবিত্রতা রক্ষায় এখানে বিচ্ছেদের হার অনেক কম। কেননা এখানে সমাজের নৈতিক মূল্যবোধগুলোও বিশেষভাবে সক্রিয়। যখন সমাজ কর্তৃক প্রতিটি মানুষ ভালোবাসা ও সম্মান প্রাপ্ত হবে তখন আইন বা বিধানের তুলনায় এ মূল্যবোধগুলো আরও অধিক শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।

আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ (Spiritual values):

৬. আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ (Spiritual values): সমাজের প্রায় প্রতিটি মূল্যবোধই মানুষের সৃষ্টি যা ব্যক্তি ও সমাজভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ মূল্যবোধগুলোই মূলত পৃথিবীতে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের জন্য দায়ী। কেননা প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব মূল্যবোধকে সঠিক মনে করে এবং তা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এ মূল্যবোধগুলো সময় ও স্থানভেদে অস্থায়ী এবং পরিবর্তিত হতে পারে। বর্তমান প্রজন্মের মূল্যবোধের সাথে হয়তো পূর্বের মূল্যবোধের মিল নাও থাকতে পারে। কিন্তু প্রতিটি মূল্যবোধেই কিছু উপাদান আছে যা অপরিবর্তনীয় এবং সৃষ্টির আদিকাল থেকে চলে আসছে। এগুলো মূলত শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয়। এ ধরনের মূল্যবোধকে সাধারণত আধ্যাত্মিক বা ঐশ্বরিক মূল্যবোধ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় যেগুলোর মুত্যু নেই।

সমাজকর্ম পেশার মূল্যবোধ (Values of Social Work Profession)

প্রতিটি পেশার পেশাগত অনুশীলনে কতিপয় মূল্যবোধ অনুসৃত হয়ে থাকে। তেমনি সমাজকর্ম পেশার কতিপয় মূল্যবোধ রয়েছে যেগুলোকে সমাজকর্মের মূল্যবোধ বলা হয়ে থাকে। আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্ম সমিতি (NASW) সমাজকর্মের কতিপয় মূল্যবোধের উল্লেখ করেছে। এগুলো হলো:

১. ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদা (Individual worth and dignity);

২. মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন (Respect of people);

৩. পরিবর্তনের মূলে রয়েছে ব্যক্তির সামর্থ্যের মূল্যায়ন (Valuing individuals capacity for change);

৪. সেবা গ্রহণকারীর আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার (Client self-determination);

৫. গোপনীয়তা (Confidentiality and privacy);

৬. ব্যক্তি মানুষকে তাদের প্রতিভা উপলব্ধির সুযোগ প্রদান (Providing individuals with opportunity to realize their potential);

৭. জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা (Efforts to meet the basic needs of the people.),

৮. সামাজিক ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার এবং সামাজিক পরিবর্তন ( social Justice and Commitment to social change);

৯. মৌল চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত সম্পদ ও সেবা প্রদানের প্রচেস্টা (Seeking to provide individuals with adequate resources and services to meet their basic needs);

১০. সাহায্যার্থীদের ক্ষমতায়ন (Client empowerment);

১১. সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান (Equal opportunity);

১২. বৈষম্য না করা (Non discrimination);

১৩. মানব বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন (Respect of human diversity);

১৪. অন্যের নিকট পেশাগত জ্ঞান ও দজ্ঞতা প্রচারের সদিচ্ছা (Willingness to transmit professional knowledge and skills to others)

সমাজকর্ম পেশার মূল্যবোধসমাজকর্ম পেশার মূল্যবোধআরও পড়ুনঃ সমাজকর্মে পেশার ধারণা (Concept of Profession in social work)

সার্বিকভাবে সমাজকর্ম পেশার মূল্যবোধগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

✓ ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি (Recognition of inhernt worth and dignity of individual): প্রতিটি মানুষের সামাজিক মূল্য ও মর্যাদাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তাছাড়া ব্যক্তিও চায় যেন সমাজ বা সে যে পরিবেশে বাস করে সেখানে তার যথার্থ মূল্যায়ন হোক। পাশাপাশি প্রতিটি ধর্মও ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদাকে গুরুত্বসহকারে স্বীকৃতি দেয়। বাপ্তির অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা হলে ব্যক্তির মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধিত হয়। এর ফলে ব্যস্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি হয় এবং সমাজের সকল রকম গঠনমূলক কাজে সে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে। এতে ব্যক্তির নিজস্ব এবং নানা সামাজিক সমস্যাও দূর হয়। এ মূল্যবোধ ব্যক্তিকে অধিকতর সক্ষম ও কর্মমুখী করে ভোলার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করে থাকে।

২. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার (Right of self-determination): সমাজকর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ আলো আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। ব্যক্তির পছন্দ, চাহিদা, সামর্থ্য এবং ক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ মূল্যবোধ ব্যক্তিকে তার স্বকীয়তা এবং যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ব্যক্তিকে সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে ও মূল্যবোধ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ মূল্যবোধ বা নীতির অনুশীলনের মাধামে ব্যক্তি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিজের সমস্যাগুলোকে নিজেই সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে পারে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যক্তি যদি নিজের অজান্তে এমন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে যা তার এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত সেক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা তাদের সাহায্যের হাত প্রসারিত করে।

Equal opportunity for all

সকলের জন্য সমান সুযোগ (Equal opportunity for all): সমাজকর্মের অন্যতম দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স ও স্তর নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।” এ মূল্যবোধের আলোকে সমাজকর্ম প্রতিটি মানুষের স্বার্থ এবং সুযোগকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সমাজকর্মের এ মূল্যবোধ ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন ধর্মসমূহ যেমন সকলের সমান সুযোগকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে তেমনি সমাজকর্মও এর ব্যতিক্রম নয়। কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নয় বরং সমাজের সর্বস্তরের জনগণের অধিকারকে নিশ্চিত করতে এবং সমাজকে বৈষম্য ও ভেদাভেদ মুক্ত রাখতে এ মূল্যবোধ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। সর্বস্তরের মানুষ যাতে নিজস্ব যোগ্যতা, ক্ষমতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধার সমঅধিকার ভোগ করতে পারে তার প্রতি সমাজকর্ম বিশেষ জোর দিয়ে থাকে।

৪/ সম্পদের সদ্ব্যবহার (Utilization of resources): সম্পদের সর্বোচ্চ এবং যথাযথ ব্যবহার প্রতিটি সমাজ ও মানুষের কল্যাণের জন্য প্রয়োজন। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সম্পদের বহুবিধ ব্যবহারকে উপযোগী করে তোলে। সমাজকর্মে সম্পদের সদ্ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত। কেননা সমাজকর্ম সর্বদাই নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্বাসী। পাশাপাশি সমাজকর্ম সম্পদের অপচয় রোধেও সোচ্চার। এজন্য সমাজকর্ম বস্তুগত ও অবস্তুগত সকল ধরনের সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে।

স্বনির্ভরতা অর্জন (Self-reliance

স্বনির্ভরতা অর্জন (Self-reliance): সমাজের মানুষকে আত্মনির্ভর হতে উদ্বুদ্ধ করা সমাজকর্মের অন্যতম মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত। স্বনির্ভরতা বলতে মূলত নিজের ওপর নির্ভর করাকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ এখানে পরনির্ভরশীলতা বা অন্যের ওপর নির্ভর করাকে সংকীর্ণ অর্থে দেখানো হয়েছে। নিজস্ব চিন্তা চেতনা যা সমাজে স্বীকৃত এবং মেধা, মননশীলতা, শ্রম, বুদ্ধি-বিবেচনা প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীব হিসেবে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাকেই স্বনির্ভরতা অর্জনের মূলমন্ত্র মনে করা হয়। স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমেই ব্যক্তি সমাজের কল্যাণে গতিশীল ভূমিকা রাখতে পারে। পরমুখাপেক্ষী বা পরনির্ভরশীলতা মূলত গতিশীল সামাজিক অগ্রগতি ও কল্যাণকে ব্যাহত করে। অন্যের দান, অনুগ্রহ ও করুণার মাধ্যমে কখনোই ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতা বা প্রতিভার বিকাশ হয়না। 

মূল্যবোধের ধারণামূল্যবোধের ধারণাআরও পড়ুনঃ সমাজকর্মের গুরুত্ব (Importance of Social Work)

এছাড়ও,

  • গনতান্ত্রিক অধিকার
  • শ্রমের মর্যাদা
  • ব্যাক্তিস্বাধীনতা
  • সামাজিক দায়িত্ববোধ
  • পারস্পারিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ 

এসব হলো সমাজকর্ম পেশার মূল্যবোধ যা সমাজকর্মের ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করবে আসা করা যায়। 

1 thought on “মূল্যবোধের ধারণা | মূল্যবোধ কি? এর বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা”

Leave a Reply