সমাজকর্মের গুরুত্ব (Importance of Social Work)

বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সেবা কার্যক্রম হিসেবে অধিক পরিচিত। বয়সে নবীন হলেও সমালের সার্বিক কল্যাণে এর গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য। আধুনিক সমাজের বিভিন্ন জটিল আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানে সমাজকর্মকে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। সমাজকর্ম সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টি সমস্যাসহ নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য সম্ভাব্য ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টা চালায়। বিশেষ করে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, জনসংখ্যাস্ফীতি, বেকারত্ব, অপরাধ, কিশোর অপরাধ, মাদকাসক্তি, বস্তি, সন্ত্রাস প্রভৃতি মোকাবিলায় সমাজকর্ম প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। এসকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে সমাজকর্ম বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও কৌশল উদ্ভাবন করে সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান করতে সচেষ্ট হয়। পাশাপাশি সমাজকর্ম সকল ধরনের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গণশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্যে চাহিদাভিত্তিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাই সঙ্গত কারণে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমাজকর্মের গুরুত্ব অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নকেই নির্দেশ করে। মানুষ যতই অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করুক না কেন যদি সামাজিক  শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ  বজায় না থাকে তাহলে কোন কাজে আসবেনা।

 

সামাজিক সমস্যার প্রকোপ বৃদ্ধি

সামাজিক সমস্যার প্রকোপ বৃদ্ধি

অথবা সামাজিক সমস্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তবে সে সমাজে সার্বিক সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা ব্যতীত সামাজিক জীবনের সার্বিক কল্যাণ অসম্ভব।

উন্নয়ন সাধিত হ্যা না। একইভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যদি অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না থাকে তবে সেই একই ঘটনা ঘটবে। তাই সমাজের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষো প্রয়োজন সুষম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম মানুষের চাহিদা, প্রয়োজন ও জীবন মানের উন্নয়ন সাপেক্ষে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে।

সুষ্ঠু সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা ব্যতীত সামাজিক জীবনের সার্বিক কল্যাণ অসম্ভব। তাই আধুনিক সমাজকর্মের একটি অন্যতম বাবারিক ক্ষেত্র হলো কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের বৃষৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বাস্তবভিত্তিক সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এ ধরনের সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সমাজকর্মের জ্ঞান, কলাকৌশল প্রয়োগের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে। সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে; সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনা, প্রয়োজন, চাহিদা প্রভৃতি। পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ের পরিবর্তন হচ্ছে তা হলো- সামাজিক সমস্যা। বিশেষ করে সমস্যাগুলো পরিবর্তিত হয়ে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। উদ্ধৃত জটিল পরিস্থিতি কখনই সমাজের মজাল বয়ে আনতে পারে না। তাই পরিবর্তনের বাহক হিসেবে সমাজকর্মের জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাজকর্ম সমাজে বিরাজমান সমস্যাগুলো দূর করে কাঙ্ক্ষিত ও পরিকল্পিত পরিবর্তন আনয়ন করে সামাজিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে।

✌✌আরও পড়ুনঃ দরিদ্র আইনের ধারণা (Concept of Poor Law) | ইংল্যান্ডের আইন

সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত

সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্তই হলো সামাজিক সচেতনতা। সমাজে বিরাজমান যেকোনো ধরনের সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্যে সমস্যা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা আবশ্যক। কেননা মানুষ যদি সমস্যা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ না করে তবে ভবিষ্যৎ প্রভাব এবং তাদের করণীয় সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাবে। মানুষ যদি সচেতন থাকে তবে পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারবে। পাশাপাশি তাদের অধিকারও সমুজ্জ্বল থাকবে।

সমাজকর্ম মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ লক্ষ্যে সমাজকর্মীগণ সভা-সমিতি, আলোচনা সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, বুকলেট, ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে থাকে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সমস্যামুক্ত সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সকল মানুষের স্বনির্ভরতা অর্জন অত্যাবশ্যক। এ লক্ষ্যে সমাজকর্ম নিম্নস্থ সম্পদ ও সামর্থোর সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক স্বনির্ভরতা অর্জনের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় সমাজকর্ম বাহ্যিক ও বস্তুগত সহায়তাকে নিরুৎসাহিত করে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রচেষ্টা চালায়। কেননা সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, বাহ্যিক ও বস্তুগত সহায়তা ব্যক্তিকে কেবল পরনির্ভরশীলই নয় বরং পরমুখাপেক্ষীও করে তোলে। তাই পেশাদার সমাজকর্ম মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।

✌✌আরও পড়ুনঃ সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট । ইংল্যান্ডে ও আমেরিকা

পেশাদার সমাজকর্ম মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ করে স্বাবলম্বী। হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।

ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া সমাজের সার্বিক কল্যাণ অসম্ভব। সমাজে ন্যায়বিচার থাকলে সামাজিক অসন্তোষ ও বৈষম্য হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম মানুষের অন্তনিহিত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ, সম্পদের সুষম বণ্টন ও মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে একটি সুখী সমৃদ্ধ সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালায়। পেশাদার সমাজকর্ম প্রাতিষ্ঠানিক সেবাদানে বিশ্বাসী। সনাতন পদ্ধতিতে সহায়তা দানের পরিবর্তে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দানের অন্তর্ভুক্ত করে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম অধিক সক্রিয়। এ লক্ষ্য অর্জনে সমাজকর্ম প্রাতিষ্ঠানিক সেবার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। এ জন্যে সমাজকর্ম বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা গ্রহণ করে থাকে।

আধুনিক সমাজকর্ম?

আধুনিক সমাজকর্ম মূলত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর সমস্যা সমাধান ও সাহায্যকারী প্রক্রিয়া। শুধু বদান্যতা বা দানশীলতার মাধ্যমে নয় বরং সমস্যার কার্যকরী ও বাস্তবসম্মত সমাধানে সমাজকর্ম দৃঢ় প্রত্যয়ী। এ লক্ষ্যে সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্ম তার মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান প্রদান করে থাকে। সমাজকর্ম সমাজের সব জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হলেও বঞ্চিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণে অধিক তৎপর। মূলত দরিদ্র, অক্ষম, গরুগু, বৃদ্ধ, নারী, শিশু প্রভৃতি শ্রেণির জনগণই বঞ্চিত ও অবহেলিত শ্রেণির অন্তর্গত। সমাজকর্ম এ সকল জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিভিন্ন সেবা ও সুবিধা প্রদান করে থাকে এবং তাদের মৌলিক, নৈতিক ও মানবাধিকারের ব্যাপারে সর্বদা সোচ্চার থাকে।

তাছাড়া সমাজকর্ম শ্রেণি স্বচ্ছ ও শ্রেণি বৈষম্য হ্রাস করে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় এ সকল জনগোষ্ঠীর ভূমিকাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। সমাজকর্ম নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক প্রগতি অর্জন এবং সমাজে নেতার ভূমিকা কীরূপ হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দান করে থাকে। এ ধারায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণকে সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতা ও প্রতিভার বিকাশ সাধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিল্প বিপ্লবোত্তর শিল্পায়ন

শিল্প বিপ্লবোত্তর শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে সমাজে যেসব জটিল ও বহুমুখী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্যে দক্ষতাসম্পন্ন বা পেশাদার কর্মীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সমাজকর্ম সমাজকর্মী সৃষ্টিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে পেশাদার সমাজকর্মীগণ সমাজকর্মের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, নৈপুণ্যকে কাজে লাগিয়ে সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান করতে পারে। সমাজকর্ম সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমস্যার কারণ, প্রকৃতি ও প্রভাব নির্ণয় করে সমস্যার কার্যকর সমাধান করে। মূলত বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে সমাজকর্ম একটি সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে সামাজিক গবেষণাকে অন্তর্ভুক্ত করে।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক সমাজজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমাজকর্মের অবদান অনস্বীকার্য। সমাজকর্ম শুধু সমস্যার কার্যকর মোকাবিলা বা সেবা প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এর জ্ঞানকে ধারণ করে একটি স্বতন্ত্র পেশার উদ্ভব ও বিকাশ সাধিত হয়েছে।

স্কিডমোর, থ্যাকারি ও ফারলে (Skidmore, Thackeray and Farley

এ প্রসজ্যে স্কিডমোর, থ্যাকারি ও ফারলে (Skidmore, Thackeray and Farley) বলেন, ‘সমাজকল্যাণ ও সমাজকর্ম আধুনিক সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়েছে, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রতিটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। সমাজকর্ম সাধারণ শিক্ষার যেমন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তেমনি সাহায্যকারী পেশার প্রস্তুতি গ্রহণেরও অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে।’ (Social welfare and social work are significant components of modern society. Directly or indirectly the affect the lives of everyone. Learning about social work is an important part of general education, as well as a part of preparation for the helping professions.)” ভাই সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যায়, মানব সভ্যতার উন্নয়নে সমাজকর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রশংসনীয়।

সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা (Importance of Social Work Study)

হাজারো সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত আমাদের এই বাংলাদেশ। পৃথিবীর অন্যান্য সমস্যাসংকুল দেশের ন্যায় আমাদের দেশের সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে সমাজকর্ম পাঠের। সমাজকর্মে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় দিককেই সমান গুরুত্ব প্রদান করা হয়। সে নিরিখে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

আধুনিক সমাজের সমস্যাগুলো বহুমুখী ও জটিল প্রকৃতির। শিল্প বিপ্লবের ফলে সমাজজীবনে যেমন যান্ত্রিক উৎকর্ষতার সৃষ্টি হয়েছে তেমনি সমাজে সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যার। বিভিন্নমুখী চাহিদা ও সমস্যা, সমস্যার কারণ, প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধানে সমাজকর্মের বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানের অপরিহার্যতা উল্লেখযোগ্য। সমাজকর্ম তার মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতির অনুশীলনের মাধ্যমে সমস্যার উৎস, কারণ, প্রকৃতি ও প্রভাব নির্ণয় করে সেগুলোর সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আমাদের সম্পদ সীমিত কিন্তু চাহিদা অসীম। এই সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে সমাজে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে বাস্তবমুখী কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন জনগণের আয় বাড়ানো যায় তেমনি ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধন করে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবীয় সকল প্রকার সম্পদের সর্বোচ্চ সভ্যবহারে সমাজকর্মের জ্ঞান বিশেষভাবে উপযোগী।

শিল্পায়ন ও শহরায়ন?

শিল্পায়ন ও শহরায়ন বিশেষ করে আধুনিকায়নের ফলে আমাদের সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হচ্ছে যা অন্যান্য অনেক সমস্যা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজকর্মের জান ব্যক্তি ও দলকে পরিবর্তিত অবস্থায় সামঞ্জস্য বিধানে বিশেষভাবে সহায়তা করে। তাছাড়া যেকোনো দেশের সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অসচেতনতা। সমাজকর্ম এসব কুসংস্কার ও কুপ্রথার প্রকৃতি, কারণ ও সমাধানের কৌশল নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে থাকে।

সুবিধাবঞ্ছিত শ্রেণির কল্যাণ

সুবিধাবঞ্ছিত শ্রেণির কল্যাণে আমাদের দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি বিদ্যমান। তার মধ্যে দিবাযত্ন কেন্দ্র, বেবিহোম, শিশু যত্ন কেন্দ্র, সংশোধনমূলক কর্মসূচি, শহর সমাজসেবা, গ্রামীণ সমাজসেবা, পরিবারকল্যাণ, নারীকল্যাণ, শিশুকল্যাগ প্রভৃতি

উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের কর্মসূচিগুলো সফলভাবে পরিচালনা করতে গেলে অবশ্যই সমাজকর্ম জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যা সমাজকর্ম জ্ঞানের আলোকে নিরসন করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশে আর্থ-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গৃহীত হলেও বাস্তবমুখী নীতি, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে যা সমাজকর্ম জানের আলোকে নিরসন করা সম্ভব। এছাড়া সমাজের বহুমুখী ও জটিল বিভিন্ন সমস্যার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সংশোধনে পেশাদার সমাজকর্মী সৃষ্টিতে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে পেশাদার সমাজকর্মী সৃষ্টিতে সমাজকর্মের জ্ঞানকে সরাসরি কাজে লাগানো যেতে পারে। সমাজকর্মের জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নীতিমালাগুলো আত্মস্থ ও অনুসরণ করে একজন সমাজকর্মী সমাজের আদর্শ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।

সুতরাং বলা যায় যে, 

আধুনিক জ্ঞান-সভ্যতার বিকাশ ও ধারাবাহিকতায় সমাজকর্ম অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। শুধু বাংলাদেশেই সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা নয় বরং সারা বিশ্বে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই সমাজ ও মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সমাজকর্ম শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

2 thoughts on “সমাজকর্মের গুরুত্ব (Importance of Social Work)”

Leave a Reply