দরিদ্র আইনের ধারণা (Concept of Poor Law) | ইংল্যান্ডের আইন

প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ডে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে। ফলে সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সুসংগঠিত উপায়ে সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনা এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ভিক্ষাবৃত্তিসহ দারিদ্র্য অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে ইংল্যান্ড সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধয়নের আইন প্রণয়ন করে। দারিদ্র্য দূরীকরণের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা প্রণয়ন করাও ছিল এ সকল আইনের অন্যতম লক্ষ্য।

মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ভিক্ষাবৃত্তি রোধকরে চতুর্দশ শতাব্দী হতে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে যে সকল আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয় সেগুলোকেই দরিদ্র আইন বলা হয়। রাজা ৩য় এডওয়ার্ড-এর ১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দের শ্রম আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রথম পদক্ষেপ হতে শুরু করে ১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দের দারিদ্র্য সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন পর্যন্ত বহু আইন প্রণীত হয়। এর মধ্যে অষ্টম হেনরি কর্তৃক প্রণীত দরিদ্র আইন ১৫৩১, ১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দের আইন, আর্টিফিসার্স আইন ১৫৬২, ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দের আইন, ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দের সংশোধনাগার আইন, ১৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দের আইনগুলো বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু কালের আবর্তে ও কতিপয় শ্রেণির অনুন্নত ও ঘৃণ্য দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এ সমস্ত দরিদ্র আইনের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং একপর্যায়ে এগুলো দরিদ্রদের প্রতি হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।

✌✌আরও পড়ুনঃ সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট । ইংল্যান্ডে ও আমেরিকা

 

তৎকালীন ইউরোপ কেমন ছিল

তৎকালীন ইউরোপ কেমন ছিল?

তৎকালীন ইউরোপের নানা বিচ্ছিন্ন অথচ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেমন- সামন্তবাদের অবসান, ভিক্ষাবৃত্তির প্রচলন, কর্মসংস্থানের অভাব, শ্রমিক স্থানান্তর সমস্যা, শহুরে জীবনের প্রতি আসক্তি, কালো মৃত্যু (প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব), জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের উদ্ভব প্রভৃতি কারণে ইংল্যান্ডের সমাজজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ভিক্ষাবৃত্তিসহ ব্যাপকহারে দারিদ্রা বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে সপ্তদশ শতাব্দীতে ১ম এলিজাবেথের সময় পূর্বোক্ত আইনগুলোর (অর্থাৎ ১৩৪৯- ১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) সমন্বয়ে নতুন আর একটি দরিদ্র আইন প্রণয়ন করা হয় যা ১৬০১ খ্রিস্টাব্দের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন হিসেবে পরিচিত। এই আইনটিও দরিদ্রদের কল্যাণে প্রণীত হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের সমাজ হতে দারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূর না হওয়ায় পরবর্তীতে ১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দের বসতি আইন, The Health and Morals Act of 1802, ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ফ্যাক্টরি আইন, ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের দরিদ্র সংস্কার আইন, ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশন প্রভৃতি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। মূলত এ সকল আইনের লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের সমাজজীবন হতে দারিদ্রদ্র্য দূর করা। তাই এ সকল আইনগুলোই ইংল্যান্ডের ইতিহাসে দরিদ্র আইন হিসেবে পরিচিত।

সুতরাং সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, রাজা ৩য় এডওয়ার্ডের সময়কালে প্রণীত ১৩৪৯ খ্রিষ্টাব্দের শ্রম আইন হতে ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশন পর্যন্ত সকল আইনগুলোকে আমরা দরিদ্র আইন হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি।

✌✌আরও পড়ুনঃ সমাজকর্মের জনক কে, সমাজকর্মের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন কে?

১৬০১ খ্রিস্টাব্দের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন (The Elizabethan Poor Law of 1601)

প্রাকশিল্প যুগে ইংল্যান্ড নানা আর্থ-সামাজিক ও দারিদ্র্য সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এ ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু যোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি কার্যক্রমের বেশির ভাগই ছিল শান্তি ও দমনমূলক। এ প্রেক্ষিতে ১৩৪৯ থেকে ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন আইনের অভিজ্ঞতার আলোকে ইংল্যান্ডের শাসকশ্রেণি দরিদ্রদের কার্যকর সাহায্য প্রদানে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সঠিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে দরিদ্র আইনটি প্রণয়ন করেন। ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ভবঘুরে সমস্যা মোকাবিলায় এটি ছিল ৪৩তম প্রয়াস এবং ইংল্যান্ডের রানি ১ম এলিজাবেথ-এর সময় এই আইনটি প্রণীত হয় বলে অনেকে একে ‘৪৩তম এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

 

১৬০১ খ্রিস্টাব্দের দরিদ্র আইনের ধারা/বিধান (Provisions of the Poor Law of 1601)

১৬০১ খ্রিস্টাব্দের দরিদ্র আইন সেবাদানের ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি দরিদ্রদের আত্মীয়স্বজন, পরিবার ও দরিদ্রের শ্রেণিবিভাগ এবং আইন প্রয়োগের কঠোরতার ওপর গুরুত্বারোপ করে এ আইনকে সরকারি দায়িত্বশীলতার প্রবর্তক হিসেবে উল্লেখ করে। এক্ষেত্রে দরিদ্রদের সাহায্য ও পুনর্বাসনে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিধান রাখা হয় যা নিচে উল্লেখ করা হলো- সেই সব দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্যদানের তালিকাভুক্তি হতে বিরত রাখা যাদের পরিবার ও সম্পদশালী আত্মীয়স্বজন তাদের দায়িত্ব গ্রহণে বাধ্য থাকে।

প্যারিশ শুধু সেসব দরিদ্রদের সাহায্য করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে যারা প্যারিশের জন্মগত বাসিন্দা অথবা কমপক্ষে তিন বছর ধরে প্যারিশে বসবাস করছে এবং যাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সাহায্যদানে অক্ষম।

সক্ষম ভিক্ষুক ও সচ্ছল আত্মীয়স্বজন সম্পন্ন ভিক্ষুকদের সাহায্য দেওয়া ও নেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া Johnson (1995) ১৬০১ খ্রিস্টাব্দের দরিদ্র আইনের প্রধান কতকগুলো বিধানের কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হলো-স্থানীয় পর্যায়ে দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা। আত্মীয়স্বজনদের দায়িত্বশীলতা বা পিতা তার সন্তান ও সন্তানের সন্তানকে সহায়তা আর সন্তানদের তার নির্ভরশীল পিতা ও পিতামহের সহায়তা দেওয়ার বিধান করা। প্রত্যেক প্যারিশের জনগণ কর্তৃক প্যারিশের নিজস্ব দরিদ্র কর প্রদান।

মূলত নিম্নরূপঃ ৩ প্রকার দরিদ্র

১. সক্ষম দরিদ্র (Able-bodied poor); সবল বা কর্মক্ষম ভিক্ষুকদের সক্ষম দরিদ্র বা ‘Sturdy beggar’ বলা হতো। এদের ভিক্ষা দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল এবং সংশোধনাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। কেউ অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ বা কঠোর শাস্তি প্রদান করা হতো।

২. অক্ষম দরিদ্র (Impotent poor): রুম, বৃদ্ধ, পঙ্গু, বধির, অন্ধ এবং সন্তানাদিসহ বিধবা প্রমুখ যারা কাজ করতে সক্ষম নয় তারাই অক্ষম দরিদ্রদের পর্যায়ভুক্ত। অক্ষম দরিদ্রদেরকে দরিদ্রাগারে রেখে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হতো তাদের। যদি কারো আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকতো এবং সেখানে ভরণপোষণের জন্য কম খরচ হত তাহলে তাদেরকে সেখানে রেখে Overseer (ওভারসিয়ার)-এর মাধ্যমে সাহায্য করা হতো। 

৩. নির্ভরশীল শিশু (Dependent Child): এতিম, পরিত্যন্ত ও অক্ষম পিতামাতার সন্তানেরা এ পর্যায়ভুক্ত। এদেরকে কোনো নাগরিকের কাছে বিনা খরচে দত্তক অথবা কম খরচে লালন-পালনের জন্য দেওয়া হতো। এক্ষেত্রে ছেলেদের ২৪ বছর পর্যন্ত এবং মেয়েদেরকে ২১ বছর বা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মনিবের বাড়িতে থাকতে হতো।

 

১৬০১ খ্রিষ্টাব্দের দরিদ্র আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া (Implementation process of the Poor Law of 1601)

১/ প্রশাসনিক কাঠামো (Administrative structure): ১৬০১ খ্রিস্টাব্দের দরিদ্র আইনের সুষ্ঠু ও যথাযথ সমন্বয়ে প্রশাসনের দায়িত্ব ওভারসিয়ারদের (overseer) হাতে অর্পিত হয়। ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক এসকল ওভারসিয়ার নিযুক্ত হতো। এদের কাজ ছিল নিম্নরূপ-

ক. সাহায্যার্থী দরিদ্রদের নিকট হতে দরখাস্ত গ্রহণ কর।।

খ. সাহায্যার্থী দরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা।

খ. সাহাযোর ধরন ও প্রকৃতি নির্ণয় করা। ঘ. কাকে সাহায্য দেওয়া হবে এবং কাকে দেওয়া হবে না, কাকে শ্রমাগারে পাঠনো হবে বা পাঠানো হবে না তা বিচার করা।

২. অবকাঠামোগত ব্যবস্থা (Infrastructure system); এ আইন অনুসারে প্রতিটি প্যারিশের পুরাতন অব্যবহৃত ব্রাডিগুলোকে সংশোধনাগার ও দরিদ্রাগার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ৩. আয়ের উৎস (Sources of income); দরিদ্র সহায়তা ও সাহায্যদানের জন্য অর্থ যোগানের মূল উৎস ছিল দরিদ্র কর। এছাড়া ব্যক্তিগত দান, বেসরকারি সাহায্য, দানকৃত সম্পত্তির আয় এবং আইন ভঙ্গের জরিমানা থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্য কার্যে ব্যয় করা হতো। ওভারসিয়ারগণ এ সকল দরিদ্র কর আদায়, যাৰতীয় হিসাব সংরক্ষণ এবং সাহায্য বিতরণের সার্বিক কাজ করতো।

সমাজকর্ম পেশায় ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব (Importance of Poor Law of 1601 in Social Work Profession)

১৬০১ খ্রিস্টাব্দের দরিদ্র আইন দরিদ্র জনগণের তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক ও বাসস্থানজনিত সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। এ আইনের অধীনে দরিদ্রদের সাহায্য ও পুনর্বাসনে বিভিন্ন কর্মসূচি সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ে অসহায় ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের সাহায্যদানে সরকারিভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় লোকেরাও যেন দরিদ্রদের সেবায় এগিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ত্রাণ সহায়তা, পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা এবং দরিদ্র কর আরোপের মাধ্যমে এ আইনে দরিদ্রদের সুন্দর জীবনযাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে বেকার, শিশু ও অক্ষম দরিদ্রদের জীবিকা লাভের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে এ আইনে দরিদ্রদের সাহাযা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ফসল হিসেবে বিবেচিত হয়।

সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যায় যে, ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দের দরিদ্র আইনকে বর্তমান বিশ্বের আধুনিক ও পেশাদার সমাজকর্মের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি আধুনিক সমাজকর্মের পেশাগত মান অর্জনে এ দরিদ্র আইনের জ্ঞান বিশেষভাবে সহায়তা করে। দরিদ্রদের জন্য গৃহীত কর্মসূচিগুলো পরবর্তীতে আমেরিকায় ব্যাপকভাবে অনুশীলন হয় এবং এই সেরা পেশাগত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে, যা বিশ্বজুড়ে বঞ্চিত ও দরিদ্র শ্রেণির কল্যাপে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়। তাই আধুনিক সমাজকর্ম পেশা মূলত ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দের সরিদ্র আইনের প্রতি বিশেষভাবে ২৪

সমাজকর্ম পেশায় ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের ভূমিকা (Role of the Poor Law Commission of 1905 in Social Work Profession)

১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। এ কমিশনের বাস্তবমুখী সুপারিশমালা ইংল্যান্ডের সমাজসেবার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করে। এখানে দরিদ্রদের সাহায্য দানের ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। দরিদ্র আইন কমিশনের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সময়ে কতকগুলো সামাজিক আইন প্রণীত হয়। যেগুলো ইংল্যান্ডের সমাজজীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে।

এ আইন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯০৬ সালের খাদ্য আইন (Provision of Meals Act-1906) প্রণীত হয় যার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯০৭ সালের শিক্ষা আইন (Education Act-1908) প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের আলোকে বৃদ্ধ বা প্রবীণ ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি হিসেবে পেনশনের ব্যবস্থা করা হয় যা ১৯০৮ সালের বৃদ্ধকালীন পেনশন আইন (Old age Pension Act-1908) গঠনের মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়। এই পেনশন আইনের মাধ্যমে সত্তর বছরের ঊর্ধ্বে দরিদ্র ব্যক্তিদের সাপ্তাহিক ৫ সিলিং করে পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের আলোকেই ১৯০৯ সালের শ্রমিক বিনিময় আইন (Labour Exchange Act-1909) প্রবর্তন করা হয় যেখানে বোর্ড অব ট্রেড (Board of Trade)-কে শ্রম বিনিময় কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে শ্রমিকদের চাকরি সহায়তা, শ্রমিক গতিশীলতা বৃদ্ধি ও নিয়োগদাতাদের দক্ষ ও যোগ্য শ্রমিক সরবরাহে সহায়তা করা হয়। একই সময় সক্ষম দরিদ্রদের শ্রমাগার ও অক্ষম দরিদ্রদের দরিদ্রাগারে রাখার পরিবর্তে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ১৯০৯ সালের দরিদ্র আইন সংশোধন (Correction of the Poor Law Act-1909) পাস করা হয়।

১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের আলোকে ১৯১১ সালের জাতীয় বিমা আইন (National Insurance Act-1911)

প্রণয়ন করা হয় যার মাধ্যমে স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা করা হয়। এখানে সরকারি অনুদান, নিয়োগকারী ও শ্রমিকদের চাঁদা দ্বারা এ কর্মসূচির অর্থের সংস্থান করা হয়। ১৯২৫ সালের বিধবা, এতিম ও বৃদ্ধ পেনশন আইন (Widows, Orphans and Old age Contributory Pensions Act-1925) প্রণয়নেও দরিদ্র আইন কমিশনের ভূমিকা লক্ষ করা যায়। এ আইনের মাধ্যমে সামাজিক বিমা নীতিতে পঁয়ষট্টি বছরের উর্ধ্বে পুরুষ, ষাট বছরের উর্ধ্বে মহিলা, বিধবা, এতিম এবং চৌদ্দ বছরের নিচে নির্ভরশীল শিশুদের জন্য বিমা সুবিধা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৩১ সালের জাতীয় অর্থনীতি আইন (National Economy Act-1931) প্রণয়নের ক্ষেত্রেও দরিদ্র আইন কমিশনের প্রভাব ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। এ আইনে বেকার শ্রমিকদের এবং বিমা বহির্ভূত বেকার শ্রমিকদের জন্য সাহায্য প্রদানের ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

শেষকথা,

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের সুপারিশমালা ইংল্যান্ডের সমাজকল্যাণ এবং আধুনিক সমাজকর্ম পেশার ভিত্তি সুদৃঢ়করণে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কেননা এর মাধ্যমেই সাহায্য ব্যবস্থাকে বিভিন্ন সামাজিক আইনের নীতিমালায় এনে এক অভাবনীয় পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। তাই পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশে ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

2 thoughts on “দরিদ্র আইনের ধারণা (Concept of Poor Law) | ইংল্যান্ডের আইন”

Leave a Reply