সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট । ইংল্যান্ডে ও আমেরিকা

সমাজকর্ম পেশার ইতিহাসে বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকা ও কার্যক্রম (Role and Programmes of Different Organizations in the History of Social Work Profession)

সমাজকর্ম পেশার বিকাশে বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবে আধুনিক সমাজকর্মের উৎপত্তি ইংল্যান্ডে হলেও মূলত আমেরিকায় গতিশীল ধারায় তা বিকশিত হয়ে সর্বপ্রথম পেশাগত মর্যাদা লাভে সক্ষম হয়। নিচে সমাজকম পেশার ইতিহাসে বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকা ও কার্যক্রম তুলে ধরা হলো-

দান সংগঠন সমিতি (COS) উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াধে ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় সমাজসেবা ক্ষেত্রে দান সংগঠন সমিতির উদ্ভব ঘটে যা পেশাদার

সমাজকর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মূলত শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে যে সমাজকল্যাণ বা সমাজসেবামূলক প্রচেষ্টা চালানো হতো তা ছিল বিচ্ছিন্ন ও অসংগঠিত। এ সকল সমাজকল্যাণ বা সমাজসেবামূলক কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রথমে ইংল্যান্ডের লন্ডনে ১৮৬৯ সালে এবং পরে আমেরিকার নিউইয়র্কের বাফেলো শহরে ১৮৭৭ সালে দান সংগঠন সমিতি (COS) প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরিস্থিতি ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে দান সংগঠন সমিতির ধারণা ইংল্যান্ড হতে আমেরিকায় বিবর্তিত হয়ে পেশাদার সমাজকর্মের বীজ রোপিত হয়।

✌✌আরও পড়ুনঃ সমাজকর্ম, সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Aims and Objectives of Social Work)

 

দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ (Aims and objectives of COS)

দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ (Aims and objectives of COS)

দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-

১. দরিদ্রদের কার্যকরভাবে সহায়তা দেওয়া,

২. সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনগুলোর কাজের দ্বৈততা পরিষার করা;

৩. বিভিন্ন ত্রাণ সংগঠনের মধ্যে অর্থহীন প্রতিযোগিতা বন্ধ করা;

৪. সম্পদের অপচয় রোধ করা;

৫. বিভিন্ন রকম দান কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি রোধ করা।

দান সংগঠন সমিতির নীতিমালা (Principles of COS)

১. স্থানীয় দান সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করে এগুলোর মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন করা;

২. কেন্দ্রীয়ভাবে দরিদ্রদের গোপন তালিকা প্রস্তুত করা; দান সংগঠন সমিতির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া (Implementation process of COS)

৩. বন্ধুভাবাপন্ন পরিদর্শকের মাধ্যমে সকল সাহায্যার্থীর সামাজিক অবস্থা তদন্ত সাপেক্ষে সাহায্যের ধরন নির্ণয় করা।

দান সংগঠন সমিতির (COS) কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য একটি অনুসন্ধান বিভাগ খোলা হয়। এর মাধ্যমে অভিভাবকগণ বিভিন্ন সমিতি ও সমাজসেবীদের নিকট থেকে সাহায্যার্থী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। তাছাড়া এর লক্ষ্য ও নীতিমালা বাস্তবায়নে কোনো একটি শহরকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে প্রত্যেকটিতে একটি করে কমিটি ও কিছুসংখ্যক পরিবার পরিদর্শক রাখা হয়। এছাড়া যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সেবাদানে নিযুক্ত করা হয় সেগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

১।যেসব ত্রাণ কার্যক্রমমূলক প্রতিষ্ঠান ছিল সেগুলোর উদ্দেশ্যে তহবিল সংগ্রহ করা।

২।যেসকল প্রতিষ্ঠান কোনো ত্রাণ প্রদান করতো না সেগুলোকে প্রধান সংগঠনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সাহায্য

করা। উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেকারদের জন্য কাজ খোঁজা হতো এবং তাদের নবু, আত্মীয়স্বজন, গির্জা, নিয়োগকারী ও অন্যান্য উৎসের নিকট কাজের অনুরোধ করা হতো। এক্ষেত্রে কর্মীরা প্রথমদিকে নীতিগতভাবে স্বেচ্ছাসেবী ছিল কিন্তু পরবর্তীতে সমাজ বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে বেতনভোগী ব্যক্তি হিসেবে সম্পূরক ভূমিক পালন করে।

✌✌আরও পড়ুনঃ মৌলিক মানবিক চাহিদা বলতে কী বুঝ

সমাজকর্ম পেশার বিকাশে দান সংগঠন সমিতির ভূমিকা

(Role of COS in the Development Social Work Profession)

ইংল্যান্ডে দান সংগঠন সমিতি দরিদ্রদের সহায়তা প্রদানে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর ফলে সমাজকল্যাণ ও সেবামূলক কাজ অনেক সুসংগঠিত আকারে প্রকাশ পেতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের বড় শহরগুলোতে এ ধরনের বহু সমিতি গড়ে ওঠে। সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সাহায্যের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে দরিদ্র ত্রাণ ও বেসরকারি দানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি ভুয়া সাহায্য সংস্থা ও পেশাদার ভিক্ষুকদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রমের ফলে দরিদ্রদের নৈতিক মনোবল শক্তিশালী হতে থাকে। ফলে তারা আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

ইংল্যান্ডে ও আমেরিকাতে সমাজকর্ম পেশার বিকাশ

ইংল্যান্ডের পাশাপাশি আমেরিকাতেও সমাজকর্ম পেশার বিকাশে দান সংগঠন সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সমিতি দরিদ্রদের সহায়তা দানের সাথে সাথে দারিদ্র্যের কারণ উদ্‌ঘাটনে নানামুখী প্রচেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শিশু শ্রম আইন এবং কিশোর-যুবকদের জন্য বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও আমেরিকার দান সংগঠন সমিতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক পেশাদার সমাজকর্ম বা সমাজকর্ম পেশার বিকাশে আমেরিকার দান সংগঠন সমিতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করে তা হলো সমাজসেবা শিক্ষা কোর্স।

সমাজসেবা শিক্ষা কোর্স চালু

সমাজকল্যাণে ‘সমাজসেবা শিক্ষা কোর্স’ চালু করা। ১৮৯৩ সালে এনা এল ডয়েস সমাজসেবায় পেশাগত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং ১৮৯৭ সালে ম্যারি রিচমন্ড ‘Tranning School for Applied Philanthropy’ প্রতিষ্ঠা করে সমাজকর্মের ক্ষেত্রে পেশাগত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেন; যা ছয় মাসের প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে এটি। ‘নিউইয়র্ক স্কুল অব সোশ্যাল ওয়ার্ক’ এ উন্নীত হয়। ১৮৯১ সালে এই সমিতি ‘Charities Review’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে। ১৯১০ সালে উক্ত পত্রিকাটি অন্যান্য পত্রিকার সাথে যুক্ত হয়ে “The Survey’ নামে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। এ সকল গৃহীত শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রকাশিত পত্রিকা সমাজকর্মের পেশাদারিত্বের বিকাশে এটি নতুন পথের সন্ধান দান করে।

তাই দেখা যাচ্ছে যে, দান সংগঠন সমিতি (COS) প্রথমে ইংল্যান্ডে সূচিত হলেও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তা আমেরিকাতে ব্যাপকভাবে অনুশীলন হয়ে অধিকতর সুসংগঠিত হয়। আমেরিকায় এ সংগঠনগুলোর মানোন্নয়নে শিক্ষামূলক কর্মসূচি ও কোর্সের সন্নিবেশ ঘটানো হয় এবং COS এর ভূমিকাকে বিশেষ কৌশলে সমাজকর্ম পেশার বিকাশে প্রয়োগ করা হয়।

 

জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি (National Association of Social Workers- NASW)

আমেরিকা ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সমাজকর্ম পেশার মানোন্নয়নে ‘জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি’ (NASW) গরকল ভূমিকা পালন করে আসছে। আমেরিকার প্রথম মৌলিক পেশাগত সংগঠন (Basic Professional Organization) হিসেবে ১৯২১ সালে Association of Social Workers প্রতিষ্ঠিত হ্যা। এরই ধারাবাহিকতায় সমাজকর্ম পেশার পেশাগত সংগঠন হিসেবে ১৯৫৫ সালের ১ অক্টোবর National Asunciation of Social Workers-NASW প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত আমেরিকার ৭টি পেশাগত সংগঠনের সমন্বয়ে এই সমিতি প্রতিষ্ঠিত।

প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে এর সংগঠনগুলো কর্মীদের পেশাগত মানোন্নয়ন, সমাজকর্ম অনুশীলনের আদর্শিক মান বজায় রাখা, বাস্তব উপযোগী নীতি প্রণয়ন ও বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে পেশাদারিত্ব অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া সমাজকর্ম অনুশীলনে সাধারণ ও বিশেষায়িত নৈতিক মানদণ্ড (Code of Ethics) নিধারণেও NASW-এর অবদান উল্লেখযোগ্য। Academy of Certified Social Workers, The NASW Register of Clinical Social Workers এবং The Diplomate in Clinical Social Work-এর মাধ্যমে পেশাদার কর্মীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন নিশ্চিত করতে এ সমিতি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া এই সমিতি পেশাগত সম্মেলন এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজকর্ম পেশার মানোন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

NASW-এর সাংগঠনিক কাঠামোতে একটি প্রতিনিধি সম্মেলনের বিষয় রয়েছে। প্রতি তিন বছর পরপর এ সংসদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সমিতির নীতিমালা ও বিভিন্ন কার্যক্রম গৃহীত হয়। সমাজকর্ম পেপার

জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি NASW কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়

মানোন্নয়ন এবং সমাজকর্মীদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে NASW ১৯৬১ সালে ‘Academy of Certified Social Workers’ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৫৫ সালের ১ অক্টোবর। NASW-এর Delegate Assembly-র মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে পেশাদার সমাজকর্মীদের লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হ্যা। Academy of Certified Social Workers (ACSW) সকল পেশাদার সমাজকর্মীদের লাইসেন্স প্রদানের শর্ত ও যোগ্যতা হিসেবে মাস্টার্স ডিগ্রি (MSW), দুই বছরের অভিজ্ঞতা ও লিখিত পরীক্ষা নিধারণ কারেছে। এ শর্তগুলো আমেরিকার রাজ্য সরকার সমাজকর্ম পেশার লাইসেন্স প্রদান সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের Guideline হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। রাজ্য সরকার সমাজকর্মীদের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে ACSW-এর সদস্যপদ প্রাপ্তিকে শর্ত হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।

পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশে NASW সমাজকর্মের পেশাগত নৈতিক মানদণ্ডগুলো নির্ধারণ করে। ১৯৬০ সালের ১৩ অক্টোবর প্রথম প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সকল নৈতিক মানদণ্ডগুলো গৃহীত হয়। ১৯৫৫ সালে NASW প্রথম সমাজকর্মের মুখপাত্র হিসেবে একটি পত্রিকা ‘The Social Work’ প্রকাশ করে। এই পত্রিকার মাধ্যমে পেশাদার সমাজকর্মের সর্বশেষ নিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাছাড়া সমাজকর্ম পেশার গুরুত্বপূর্ণ Reference Encyclopedia of Social Work প্রকাশ করে এ পেশার শিক্ষাগত ভিভি মজবুত করতে NASW গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। NASW আরও একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘Social Work Research and Abstracts’ প্রকাশ করে থাকে যেখানে সমাজকর্ম শিক্ষা, গবেষণা ও প্রয়োগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াদি তুলে ধরা হয়। এছাড়াও NAক্র

প্রকাশিত অন্যান্য পেশাগত ত্রৈমাসিক পত্রিকার মধ্যে ‘Health and Social Work’ এবং ‘Social Work in Education’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সকল প্রকাশনা সমাজকর্ম পেশার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উন্নয়নে NASW-এর ভূমিকাকে বিশেষ অর্থবহ করে তোলে।

 

সমাজকর্ম পেশার বিকাশে NASW-এর ভূমিকা

(Role of NASW in the Development of Social Work Profession)

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আধুনিক সমাজকর্ম পেশার বিকাশে NASW-এর ভূমিকা সবচেয়ে অর্থবহ। মূলত সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে গড়ে তুলতেই NASW প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যে কোনো পেশায় পেশাগত সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এদিক থেকে সমাজকর্ম পেশার বিশ্বজনীন সংগঠন হিসেবে NASW হলো অন্যতম সুসংগঠিত পেশাগত সংগঠন। এ সংগঠন সমাজকর্ম শিক্ষার আধুনিকীকরণে যেমন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তেমনি দক্ষ সমাজকর্মী সৃষ্টিতেও অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। এ সংগঠন সমাজকর্ম শিক্ষা ও পেশার মানোন্নয়নে সমাজকর্মীদের যোগ্যতা নির্ধারণ করে থাকে। এ লক্ষ্যে সমাজকর্মীদের পেশাগত দিক বিবেচনায় সমাজকর্ম পেশার সকল প্রকার নৈতিক মানদণ্ড ও ব্যবহারিক নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। যার ওপর ভিত্তি করে সমাজকর্ম বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

সমাজকর্ম গবেষণা কার্যক্রম

তাছাড়া সমাজকর্ম গবেষণার মাধ্যমে এ পেশাকে একটি সুদৃঢ় বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে এ সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ সংগঠনের মাধ্যমে পেশাদার সমাজকর্মীদের রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এ সংগঠন সমাজকর্ম সেবার প্রশাসন ব্যবস্থার উন্নতি বিশেষ করে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও কর্ম পরিবেশ উন্নতকরণেও অগ্রণী ভমিকা পালন করছে। মানুষের সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এ সংগঠনের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত। তাই সমাজের মানুষ যেন সমাজকর্মের শিক্ষা ও পেশার সুফল ভোগ করতে পারে সে লক্ষ্যে পৃথিবীজুড়ে বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজকর্ম বিষয়ের জ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণ করছে। যেসব দেশে সমাজকর্ম শিক্ষা ও পেশার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে পর্যাপ্ত গবেষণার আলোকে সেসব দেশে সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এ সংগঠন আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

পাশাপাশি সমাজকর্ম শিক্ষা ও পেশাকে গ্রহণযোগ্য ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে এ সংগঠন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন গ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করছে। এ সংগঠনের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘Encyclopedia of Social Work Working Definition of Social Work Practice ‘Dictionary of Social Work’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সকল গ্রন্থ সমাজকর্ম শিক্ষাকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ সংগঠন ১৯১৭ সালে ম্যারি রিচমন্ড (Marry Richmond) রচিত ‘Social Diagnosis’ গ্রন্থ প্রকাশ করে, যা সমাজকর্ম শিক্ষার বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোজন। তাছাড়া এ সংগঠন হতে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘Social Work’ ও বার্ষিক পত্রিকা ‘Social Work Year Book’ সমাজকর্ম শিক্ষা ও পেশাকে পরিশীলিত রূপদানে সচেষ্ট।

সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, NASW প্রতিষ্ঠিত না হলে হয়তো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সমাজকর্ম এত দ্রুত পেশা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারতো না। তাই NASW-কে আধুনিক পেশাদার সমাজকর্মের ‘Platform’ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

 

কাউন্সিল ফর সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন

(Council for Social Work Education-CSWE)

বিশ্বব্যাপী পেশাদার সমাজকর্ম শিক্ষার বিকাশ ও প্রসারে কার্যকর ভূমিকা পালনকারী পেশাগত সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘Council for Social Work Education’ (CSWE) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘American Association of Schools of Social Work (AASSW) এবং ‘Association of Schools of Social Administration (NASSA)-এর সমন্বয়ে ১৯৫২ সালে CSWE গঠন করা হয়। এই কাউন্সিল শিক্ষার মান উন্নয়নে ছাত্রদেরকে মানসম্পন্ন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সমাজকর্মের নীতি, আদর্শ ও দর্শনের ভিত্তিতে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। পাশাপাশি সমাজকর্ম শিক্ষার পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, গবেষণা ও সেবার মানোন্নয়নেও এ কাউন্সিল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মূলত পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে CSWE-এর এই প্রচেষ্টা।

CSWE সাধারণত সমাজকর্ম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং বিশেষজ্ঞ সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা প্রদান করে থাকে। তাছাড়া সমাজকর্ম শিক্ষায় সর্বস্তরে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার কাজে এর সহায়ক ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৫ সালের জুলাই মাস হতে এই কাউন্সিল “Journal of Education for Social Work’ প্রকাশ করে যাচ্ছে।

 

সমাজকর্ম পেশার বিকাশে CSWE-এর ভূমিকা (Role of CSWE in the Development of Social Work Profession)

বর্তমান সময়ে CSWE বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি এই কাউন্সিল MSW (Masters in Social Work) কোর্স অনুমোদন দিচ্ছে। এ কাউন্সিল আরও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রসার ও প্রয়োগে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলছে। যেমন-

১. সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার এবং তার উন্নয়নে সমাজকর্মের জ্ঞানকে বিশেষভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। ন্যায়বিচারের প্রবর্তনে প্রতিবন্ধী, উপজাতি, নৃগোষ্ঠী ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিষয়গুলোতে একসাথে কাজ করছে। তাছাড়া সমাজকর্ম শিক্ষায় নারীদের ভূমিকা ও অবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে।

২. শিক্ষা কারিকুলামে লিজা এবং যৌন বিষয়ক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ৩

সমাজকর্ম শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণে CSWE বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে CSWE-এর কর্মসূচির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন শিক্ষানীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে।

৪ . আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্পে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বজনীন সমাজকর্ম শিক্ষা প্রবর্তনে কাজ করছে।

৫. সমাজকর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত একজন শিক্ষার্থী যেন নেতৃত্ব, প্রকাশনা, গবেষণা ইত্যাদি মাধ্যমের মান অর্জন সাপেক্ষে পেশাগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

 

শেষকথা,

তাই দেখা যাচ্ছে যে, সমাজকর্ম শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে CSWE-এর ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ কাউন্সিল Affirmative Action Policy and Plan ‘বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা সমাজকর্ম শিক্ষার সর্বস্তরে সুনিদিষ্ট, ধারাবাহিক এবং বৈচিত্র্যময় পরিবর্তনে বিশ্বাসী।

1 thought on “সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট । ইংল্যান্ডে ও আমেরিকা”

Leave a Reply