কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং। ১৮৫৭ সালের ২৪ জানুয়ারী তিনি “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইন”-এ সই করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছিল।

এই আইনের আওতায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচার করা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে উচ্চশিক্ষার মান উন্নত করা।

এখন আমরা জানবো এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পিছনে কাদের ভুমিকা রয়েছে এবং দেশের কি কি অবদান রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়, এছাড়াও বিশ্বের নাম করা একটি বিশ্ববিদ্যালয় এটি। 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল:

  • ঔপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশরা ভারতে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠার পর, তারা উপলব্ধি করেছিল যে তাদের প্রশাসন পরিচালনা করার জন্য শিক্ষিত ভারতীয়দের প্রয়োজন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা এই লক্ষ্য অর্জন করতে চেয়েছিল।
  • ভারতীয় নবজাগরণ: ১৯ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল। এই সময়ের অনেক ভারতীয় শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবী পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা এই আগ্রহ পূরণ করতে চেয়েছিলেন।
  • সামাজিক সংস্কার: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সমাজে সংস্কার আনা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষার মাধ্যমে তারা অন্ধবিশ্বাস, রক্ষণশীলতা এবং সামাজিক বৈষম্য দূর করতে পারবেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভারতের উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি অসংখ্য বিখ্যাত পণ্ডিত, বিজ্ঞানী, লেখক এবং রাজনীতিবিদ তৈরি করেছে। আজও, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা:

  • লর্ড ক্যানিং: ভারতের গভর্নর জেনারেল (১৮৫৬-১৮৬২)
  • আলেকজান্ডার ডাফ: স্কটিশ ধর্মপ্রচারক ও শিক্ষাবিদ
  • স্যার চার্লস উড: ব্রিটিশ সংসদ সদস্য ও শিক্ষাবিদ
  • মহারাজা মহেশ্বর সিং বাহাদুর: বর্ধমানের রাজা
  • ড. ফ্রেডরিক জন: ভারতের শিক্ষা সচিব (১৮৫৪-১৮৫৯)

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব:

  • ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ বোস, সুভাষ চন্দ্র বসু এবং জওহরলাল নেহরু।
  • ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আজও, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত।

👍👍আরও পড়ুনঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী বিষয়ক কুইজ প্রশ্ন উত্তর MCQ ২৩০+

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক কে ছিলেন? 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুইজন মহিলা স্নাতক ছিলেন:

  • কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এবং
  • চন্দ্রমুখী বসু

তারা উভয়ই ১৮৮২ সালে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন।

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন একজন ভারতীয় চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদ। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা যিনি পশ্চিমা চিকিৎসা অধ্যয়ন করেছিলেন এবং প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

চন্দ্রমুখী বসু ছিলেন একজন ভারতীয় লেখিকা এবং শিক্ষাবিদ। তিনি ছিলেন প্রথম বাঙালি মহিলা যিনি ইংরেজিতে উপন্যাস লিখেছিলেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষার ইতিহাস:

  • ১৮৭৯ সালে: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মহিলাদের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়।
  • ১৮৮২ সালে: কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এবং চন্দ্রমুখী বসু এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করে প্রথম মহিলা স্নাতক হন।
  • ১৯০০ সালে: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মহিলাদের জন্য স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রমে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দেয়।
  • ১৯১৫ সালে: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম মহিলা কলেজ , বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।
  • আজ: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা স্নাতকদের অবদান:

  • কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা স্নাতকরা ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
  • তারা শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন, রাজনীতি, সাহিত্য এবং শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
  • তারা ভারতীয় মহিলাদের জন্য শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের পথ দেখিয়েছেন।

 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব: বিস্তারিত আলোচনা 

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

  • প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়: ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, এটি ছিল ভারতের প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • জাতীয়তাবাদের কেন্দ্র: ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন।
  • বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের তৈরি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ বোস, সুভাষ চন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু, অমর্ত্য সেনের মতো অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেছেন।

শিক্ষাগত গুরুত্ব:

  • উচ্চমানের শিক্ষা: বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য, আইন, প্রকৌশল, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করে।
  • গবেষণার কেন্দ্র: বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মানবিক বিদ্যা, সামাজিক বিজ্ঞানে গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
  • বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাঙ্কিং: বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে উচ্চ স্থান অর্জন করে।

সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:

  • বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক: বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত
  • সাহিত্য ও শিল্পের পৃষ্ঠপোষক: বাংলা সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত এবং নাটকের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • বুদ্ধিজীবী আলোচনার কেন্দ্র: বুদ্ধিজীবী আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নে বিতর্কের জন্য একটি মঞ্চ প্রদান করে।

সামাজিক গুরুত্ব: 

  • সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রচার: সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমতা-র প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • মহিলা শিক্ষার পথিকৃৎ: ভারতে মহিলা শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • দক্ষ জনশক্তি তৈরি: দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অবদান রাখেন।

আরও পড়ুনঃ ৬০ টি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী বাংলা সাহিত্যের MCQ প্রশ্ন ও উত্তর

গোলাদিঘির গোলামখানা কাকে বলা হয় কেন হয়? 

গোলাদিঘির গোলাম খানা নামকরণের পেছনে ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যগত দিক থেকে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

ঐতিহাসিক দিক:

  • গোলাদিঘির নির্মাণ: মুঘল আমলে, শাহজাহান ১৬৪৭ সালে ঢাকার নবাব শাহসুজা-র নির্দেশে গোলাদিঘি খনন করেন।
  • গোলামদের বাসস্থান: এই সময়, ঢাকায় অনেক গোলাম ছিল যারা মুঘল সেনাবাহিনীতে কাজ করত। গোলাদিঘির পশ্চিম তীরে, গোলামদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছিল। এই কারণে, এই এলাকাকে “গোলাম খানা” বলা হত।

স্থাপত্যগত দিক:

  • গোলাম খানার স্থাপত্য: গোলাম খানার ভবনগুলো মুঘল স্থাপত্য শৈলীর ছিল। এগুলোতে আয়তক্ষেত্রাকার আকৃতি, কমলাকার গম্বুজ এবং সুন্দর খিলান ছিল।
  • গোলাম খানার ব্যবহার: গোলাম খানা শুধুমাত্র বাসস্থান হিসেবেই ব্যবহৃত হত না, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

বর্তমান অবস্থা:

  • গোলাম খানার ক্ষয়ক্ষতি: সময়ের সাথে সাথে, গোলাম খানার অনেক ভবন ক্ষয়ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  • গোলাম খানার সংরক্ষণ: বর্তমানে, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর গোলাম খানার অবশিষ্ট ভবনগুলো সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছে।

গোলাদিঘির গোলাম খানা ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুঘল আমলের ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছিল। বর্তমানে, গোলাম খানার অবশিষ্ট ভবনগুলো বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১৭ সালে।

কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল:

  • কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনপরিচালনা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব তৈরি করা।
  • ভারতের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়-এর জন্য সুপারিশ করা।

কমিশনের সভাপতি ছিলেন:

  • এম.ই. স্যাডলার, লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

কমিশনের সদস্য ছিলেন:

  • স্যার জে.ডব্লিউ. গ্রেগরি, ভারতের শিক্ষা বিভাগের সাবেক সচিব
  • স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য
  • প্রফেসর র‍্যামজে মুর, লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
  • স্যার আশুতোষ মুখার্জী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত আইনজীবী ও শিক্ষাবিদ
  • ডব্লিউ.ডব্লিউ. হর্নওয়েল, ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা
  • জিয়াউদ্দীন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য

কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলির মধ্যে ছিল:

  • তিন বছরের অনার্স কোর্স চালু করা।
  • স্নাতকোত্তর স্তরের গবেষণা-কে উৎসাহিত করা।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসন ব্যবস্থায় আরও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
  • মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা।
  • মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি স্কলারশিপ প্রদান করা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের প্রতিবেদন ভারতের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

শেষকথা,

আমরা জানতে পারলাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব এবং এটি প্রতিষ্ঠায় কে বা কারা অবদান রেখেছে। আসা করি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন এই তথ্যটি আপনাদের সবার অনেক উপকারে আসবে।  তথ্যটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে 

তথ্যসূত্র:

1 thought on “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন”

Leave a Reply