পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায় আজকের পোস্ট এর আলোচ্য বিষয়। এছাড়াও আজকের পোস্ট এ আমরা পারকিনসন রোগ কি, পারকিনসন রোগ কেন হয়, পারকিনসন রোগের ব্যায়াম, পারকিনসন রোগের লক্ষণ, পারকিনসন রোগের ঔষধ, পারকিনসন রোগীর খাবার ইত্যাদি সম্পর্কেও আলোচনা করবো।
পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায় । সেরা কয়েকটি উপায় 2024
পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায় । সেরা কয়েকটি উপায় 2024
তাহলে চলুন জেনে নেই পারকিনসন রোগের কারন, লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে।

পারকিনসন রোগ কি

পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেই পারকিনসন রোগ কি তা সম্পর্কে। আমাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজ যখন বিঘ্নিত হয় এবং মস্তিষ্কে থাকা কোষগুলো অধঃপতন হয়ে যায়, তখন আমাদের এই রোগ হয়ে থাকে।
একে নিউরো ডিজেনারাটিভ বা স্নায়ুবিক রোগ ও বলা হয়। আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরনের হরমোন তৈরি হয়, যা বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে থাকে। যখন আমাদের এই ডোপামিন হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, তখন আমাদের পারকিনসন নামক রোগের আবির্ভাব ঘটে।

পারকিনসন রোগ কেন হয়

একটু পরে আমরা পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানব। এখন চলুন জেনে নেই পারকিনসন রোগ কেন হয়ে থাকে তা সম্পর্কে। আমাদের ছোট থেকে বড় হওয়ার সময় শরীরের সঠিক কোষ বিভাজন, মস্তিষ্ক বেড়ে ওঠা, হাত পা বড় হওয়া ইত্যাদি কাজ সঠিকভাবে হতে থাকে।
কিন্তু একটা বয়স পর থেকে এই সমস্ত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন আস্তে আস্তে কাজের মাত্রা কমতে শুরু করে। আমাদের মস্তিষ্কে যখন ডোপামিন হরমোন এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের ক্ষয় হতে শুরু করে, ঠিক সেই অবস্থাকে পারকিনসন রোগ বলা হয়। এখন চলুন জেনে নেই পারকিনসন রোগ হওয়ার পিছনের বিভিন্ন কারন সম্পর্কে। কারনসমুহ নিম্নরুপঃ
  • ডোপামিন হরমোন এর নিঃসরন কমে যাওয়া।
  • বয়স বেড়ে গেলে।
  • জেনেটিক মিউটেশন এর কারনে।
  • পরিবারের কারো এই ধরনের রোগ থাকলে অন্যান্যদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • দূষিত পরিবেশে বসবাস করলে।
  • বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কলকারখানায় কাজ করলে।
  • আমাদের মস্তিষ্কে থাকা লুই বডির পরিমান বেশি হয়ে গেলে।

পারকিনসন রোগের ব্যায়াম

পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেই পারকিনসন রোগের বিভিন্ন ব্যায়াম সম্পর্কে। পারকিনসন রোগ হলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উদ্দীপনায় সাড়া না দেওয়া এবং হাত পা কাপা ইত্যাদি।
এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনি পারকিনসন রোগে আক্রান্ত। এই রোগ কিছুটা নির্মূল করার জন্য কয়েক ধরনের ব্যায়াম রয়েছে। এখন চলুন সেই ব্যায়ামগুলো সম্পর্কে জেনে নেই। ব্যায়ামগুলো নিম্নরুপঃ
  • রাবার বল দিয়ে ব্যায়াম – এই ব্যায়াম এর সময় একটি রাবার বলকে হাতের মুঠোয় নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরার চেষ্টা করতে হয়।
  • ডাম্বেল হাতের মুঠোয় ধরে ঐ অবস্থায় অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা। এতে করে হাত পা কাপা কিছুটা কমে যায়।
  • আমাদের প্রতিটি আংগুলে চাপ দেয়ার মাধ্যমে রক্ত আঙ্গুলে ঠিকমত পরিচালিত করা হয়। এছাড়াও আঙ্গুলের ম্যাসেজ করার মাধ্যমে হাত পা কাপা সমস্যা দূর করা যায়।
  • স্ট্রেচিং ব্যায়াম এর মাধ্যমে পারকিনসন রোগের মাত্রা কমানো যায়। এই ব্যায়ামে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে ঘাড় একবার বামে একবার ডানে ঘুরাতে হয়।
  • স্কোয়াট ব্যায়াম এর মধ্যে একবার হাটু ভাজ করে বসা এবং একবার ওঠার প্র্যাক্টিস করতে হয়। এইভাবে প্রতিদিন ১০-১৫ বার ব্যায়ামটি করতে হয়।
  • এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্র্যাক্টিস করা। এই ব্যায়ামকে বলা হয় ব্যালেন্সিং। এইভাবে করলে পারকিনসন রোগের মাত্রা কিছুটা কমে যায়।
  • প্রতিদিন আমাদের ২০-৩০ মিনিট হাটার অভ্যাস করা। কারন হাটলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে এবং পারকিনসন এর মাত্রা কমানো যায়।

পারকিনসন রোগের লক্ষণ কি

পরবর্তীতে আমরা পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানবো। এখন চলুন জেনে নেই পারকিনসন রোগ হলে কি কি লক্ষন দেখে বোঝা যায় তা সম্পর্কে। আমাদের মস্তিষ্কের অধঃপতন শুরু হলে এই রোগের আবির্ভাব দেখা দেয়। পারকিনসন রোগের লক্ষন নিম্নরুপঃ
  • আমাদের শরীর অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • আমাদের মাথা এবং হাত-পায়ে একটু একটু করে কম্পন শুরু হয়।
  • আমরা সবসময় বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকি।
  • দৈনন্দিন চলাফেরায় আমাদের কোনো আনন্দ থাকে না।
  • চোখের অতিরিক্ত আলো পড়লে বা হঠাত করে আলো কমে গেলে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।
  • আমাদের দেহের পেশী অনমনীয় হয়ে পড়ে।
  • আমাদের চলাফেরা ধীরগতিতে হয়ে থাকে।
  • আমাদের শরীরের কোনো ভারসাম্য থাকে না।
  • সাধারন কাজে বিভ্রান্তি এবং আমাদের স্মৃতিশক্তির লোপ পেয়ে যায়।
  • কন্ঠস্বর ক্ষীন হয়ে আসে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • সময়মতো প্রসাব না হওয়া।

পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায়

একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর গিয়ে আমাদের পারকিনসন নামক রোগের দেখা মিলে। আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামক হরমোন এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে অথবা জেনেটিক কারনে আমাদের এই রোগ হয়ে থাকে। পারকিনসন রোগ হলে আমাদের শরীরে অনেক পরিবর্তন চলে আসে।
চঞ্চল দেহ আস্তে আস্তে ধীরস্থির হয়ে পড়ে। আমাদের সবসময় হাত-পা কাপতে থাকে। স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। এই অবস্থায় আমাদের কিছু কাজ করলে আমরা এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে পারি। এখন চলুন জেনে নেই পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে। উপায়সমুহ নিম্নরুপঃ
  • আমাদের প্রতিদিনের খাবারে স্বাস্থ্যকর খাবার যোগ করতে হবে।
  • বেশি বেশি আশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • দৈনিক প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
  • টাটকা ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে।
  • ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
  • প্রতিদিন ব্যায়াম করা এবং অন্তত ৩০ মিনিট হাটার অভ্যাস করতে হবে।
  • প্রতিদিন নিয়ম করে সাতার কাটার অভ্যাস করতে হবে।
  • বাইরে থেকে ডোপামিন হরমোনের ইঞ্জেকশন নিতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

পারকিনসন রোগের ঔষধ

পূর্বে আমরা জেনেছি যে ডোপামিন নামক হরমোনের কারনে আমাদের পারকিনসন নামক রোগ হয়ে থাকে। আমাদের বয়স যখন ৫০ বছর পার হয়ে যায়, তখন আমাদের মস্তিষ্ক ডোপামিন নামক হরমোন উৎপাদন বন্ধ করে দিতে থাকে।
এই সময় আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষয় শুরু হয় এবং এই রোগ এর আবির্ভাব ঘটে। তবে এই রোগের মাত্রা কিছুটা কমানো সম্ভব বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং ঔষধের মাধ্যমে। পারকিনসন রোগে আক্রান্ত রোগীদের বাইরে থেকে দেহে ডোপামিন হরমোন প্রয়োগ করার জন্য লেভেডোপা নামক ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
এই হরমোন ব্যবহার করার ফলে হাত পা কাপা, চোখে ঝাপ্সা দেখা ইত্যাদি সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসে। কিন্তু এই ওষুধ অতিরিক্ত ব্যবহার করলে আমাদের শরীর একসময় এই ওষুধের কার্যক্ষমতা কে আর নিতে চায় না। তখন নতুন করে আমাদের পারকিনসন রোগের সমস্যা গুলো দেখা দিতে থাকে।

পারকিনসন রোগীর খাবার

পারকিনসন রোগীর ক্ষেত্রে সব ধরনের খাবার খাওয়া উচিত নয়। কিছু খাবার আছে যা এই রোগটার মাত্রা আরোও বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। আবার কিছু খাবার আছে যা এই রোগের মাত্রা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের কিছু খাবার আছে যেগুলো খাওয়া উচিত এবং কিছু খাবার আছে যা একেবারেই খাওয়া উচিত নয়।
যেসব খাবার খাওয়া উচিত
  • ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। যেমন- ভিটামিন বি-১, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার অনেক বেশি পরিমানে খাওয়া উচিত।
  • তাজা সবজি পারকিনসন রোগের ক্ষেত্রে উপকারী। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাজা সবজি রাখা উচিত।
  • বিভিন্ন ধরনের টাটকা ফল খাওয়া উচিত।
  • শস্যদানা তে অনেক বেশি পরিমানে শর্করা উপস্থিত থাকে। যা পারকিনসন রোগ এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • এন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার অনেক বেশি পরিমানে খাওয়া উচিত।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
  • ওমেগা-৩ জাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়
  • চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার এইসময় খাওয়া উচিত নয়।
  • খাবারের প্লেটে অতিরিক্ত লবন নিয়ে খাওয়া উচিত নয়।
  • আমরা অনেক সময় আমাদের খাবারে সোডিয়াম ব্যবহার করে থাকি। এই সোডিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।
  • বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত করা প্যাকেটের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
  • অনেক বেশি পরিমানে কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার না খাওয়াই উত্তম।
  • চিজ জাতীয় খাবার না খাওয়া।
  • দই এবং লো ফ্যাট দুধ এর মত খাবার না খাওয়াই উত্তম।

পারকিনসন রোগের চিকিৎসা খরচ

আমরা পূর্বে জেনেছি ডোপামিন হরমোন এর কারনে আমাদের এই রোগ হয়ে থাকে। যখন ডোপামিন হরমোন এর মাত্রা কমে যায় তখন থেকে এই অসুখ শুরু হয়। বাইরে থেকে অনেক সময় লেভেডোপা নামক ওষুধ রোগীর সেবনের মাধ্যমে এই অসুখ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যায়।
তবে এই ওষুধ অতিরিক্ত পরিমানে সেবন করলে আমাদের শরীর একসময় এর গুলাবলিতে আর আকৃষ্ট হয় না। তখন আমাদের চিকিৎসা করাতে হয়। এই চিকিৎসা করাতে আমাদের ১২-১৬ লক্ষ টাকা খরচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লেখকের মন্তব্য

আজকের পোস্ট থেকে আমরা পারকিনসন রোগ থেকে মুক্তির উপায়, পারকিনসন রোগ কি, পারকিনসন রোগ কেন হয়, পারকিনসন রোগের ব্যায়াম, পারকিনসন রোগের লক্ষণ, পারকিনসন রোগের ঔষধ, পারকিনসন রোগীর খাবার ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছি।
আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। এই ধরনের পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

One Comment