আজকের পোস্টের মুল বিষয় হলো ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে তা সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের পোস্টে আমরা ডেঙ্গু রোগের কারণ, ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে, শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করবো।
ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে সম্পূর্ণ তথ্য জানুন
ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে সম্পূর্ণ তথ্য জানুন

তাহলে চলুন জেনে নেই ডেঙ্গু রোগের কারন, লক্ষন এবং প্রতিকার সম্পর্কে।

ডেঙ্গু রোগের কারণ

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে তা সম্পর্কে আমরা পরবর্তীতে জানবো। এখন আমরা জানবো ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন কারন সম্পর্কে। ডেঙ্গু হলো এক ধরনের মশাবাহিত রোগ। এখন গরমকাল এবং এই সময়ে সবজায়গায় মশার উপদ্রব অনেক বেড়ে যায়।
মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারনে আমাদের এই সময় ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে। সাধারনত এডিস মশার কারনে আমাদের এই জ্বর হয়ে থাকে। যদি কোনো মশা ডেঙ্গু জীবানু বহন করে এবং সেই মশা কারো শরীরে কামড়ালে ১ সপ্তাদের মধ্যে উক্ত ব্যক্তির ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে।
আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন লক্ষন দেখা দেয়। একজন ডেঙ্গু জ্বর এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে আবার কোনো মশা কামড়ালে সেই মশা ডেঙ্গু বহন করতে সক্ষম হয়।

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে

এডিস মশার কামড়ের ফলে আমাদের শরীরে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। যখন কোনো মশা ডেঙ্গু রোগের জীবানু বহন করে এবং মানুষকে কামড়ায় সেই মানুষটি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। মশার লালায় সাধারনত এই রোগের জীবানু বিদ্যমান থাকে।
এই জীবানু আমাদের রক্তে থাকা শ্বেত কনিকাতে প্রবেশ করে এবং তার মধ্যেই প্রজনন ঘটিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে আমাদের পুরো শরীরে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি কোনো সাধারন মশা কামড়ায় তাহলে সেই মশাটিও ডেঙ্গু রোগের জীবানু বহনে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে সেই মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তির দেহের ডেঙ্গুর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এইভাবেই ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে থাকে।

ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ

পূর্বে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা ডেঙ্গু রোগের কারনে এবং বিভিন্ন লক্ষন সম্পর্কে জানব। আমাদের শরীরে যদি কোনো ডেঙ্গু বহনকারী মশা কামড় দেয় তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে।
এডিস মশার কামড়েও আমাদের এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গু রোগের জীবানুতে আক্রান্ত হওয়ার পরে ১ সপ্তাহের মধ্যে আমাদের শরীরে এর লক্ষন দেখা দিতে শুরু করে। এখন চলুন জেনে নেই ডেঙ্গু রোগের কিছু লক্ষন সম্পর্কে। লক্ষনগুলো নিম্নরুপঃ
  • আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়। যাকে আমরা জ্বর বলে থাকি। তাপমাত্রা বেড়ে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌছে যায়।
  • আমাদের মাথায় অনেক বেশি পরিমানে যন্ত্রনা করে।
  • আমাদের চোখে এবং চোখের পিছনের অংশে অনেক বেশি ব্যথা করে।
  • আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে মাংসপেশি এবং হাড়ের জয়েন্টে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া শুরু হয়।
  • সবসময় মাথাঘোরার মত সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চুলকানি বা ফুসকুড়ি জাতীয় কিছুর আবির্ভাব ঘটে।
এতক্ষন আমরা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে সাধারন উপসর্গ সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা জানব আমাদের শরীরে যখন ডেঙ্গু রোগ ভয়াবহ আকার ধারন করে তখন কি ধরনের লক্ষন প্রকাশ পায় তা সম্পর্কে। লক্ষনগুলি নিম্নরুপঃ
  • আমাদের প্রচন্ড পরিমানে পেট ব্যথা হয়ে থাকে।
  • কোনো কারন ছাড়াই অনেক বেশি বমি হওয়া শুরু হয়।
  • নাক দিয়ে অনবরত রক্ত পড়তে থাকে।
  • মলমুত্র ত্যাগের সময় রক্ত বের হয়।
  • ত্বকের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরন হয়ে থাকে।
  • শরীর অনেক বেশি পরিমানে ক্লান্তো হয়ে যায়।
  • শরীরের মধ্যে এক ধরনের অস্থির ভাব দেখা যায়।
  • নিঃশ্বাস অনেক দ্রুত আসা যাওয়া করে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার-ডেঙ্গু রোগের নিরাময় ও প্রতিকার

পূর্বে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন লক্ষন এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে। ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে আমাদের দুই ধরনের লক্ষন দেখা দেয়। প্রাথমিক লক্ষন এবং গুরুতর লক্ষন।
একজন ব্যক্তি প্রাথমিক লক্ষন দেখা দেবার পর সে যদি সঠিক চিকিৎসা নিতে পারে তাহলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের সাধারন লক্ষন পার হয়ে যাওয়ার পর যদি গুরুতর লক্ষনগুলো দেখা দেওয়া শুরু করে তখন ডেঙ্গু রোগ নিরাময় করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।
এখন চলুন জেনে নেই ডেঙ্গু রোগের কিছু লক্ষন সম্পর্কে। লক্ষনগুলি নিম্নরুপঃ
  • শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয়।
  • মাথা যন্ত্রনা হয়ে থাকে।
  • চোখে ব্যথা হয়ে থাকে।
  • শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হতে শুরু করে।
  • বমি বমি ভাব এবং বমি হয়ে থাকে।
  • মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়।
  • ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
  • প্রচন্ড পেট ব্যথা হয়ে থাকে।
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
  • মলমুত্রের সাথে রক্ত বের হয়।
  • শরীরে অনেক বেশি ক্লান্তি দেখা দেয়।
এতক্ষন আমরা ডেঙ্গু রোগ এর বিভিন্ন লক্ষন সম্পর্কে জানলাম। এখন চলুন জেনে নেই এই রোগ থেকে বাচার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে। উপায়সমুহ নিম্নরুপঃ
  • যেহেতু ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ, তাই আমাদের নিজেকে এবং নিজের পরিবারের সবাইকে মশার কামড় থেকে দূরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে মশা নিধন এবং পরিবারের চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে।
  • বাড়ির আশেপাশে কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবে না। যদি জমে থাকে তবে সেক্ষেত্রে জমা পানি ফেলে দিতে হবে।
  • পুরো শরীর ঢেকে যায় এই ধরনের পোশাক পরিধান করতে হবে।
  • মশা ভোর এর দিকে মানুষকে সবথেকে বেশি কামড়িয়ে থাকে। যার কারনে সেই সময় আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
  • রাতে ঘুমানোর আ ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে গে মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে।
  • মশা নিধন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল বা ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।

শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

পূর্বে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো শিশুর ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন লক্ষন এবং প্রতিকার সম্পর্কে। শিশুর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগের নিম্নোক্ত লক্ষনগুলো দেখা দেয়।
  • বমি বমি ভাব দেখা দেয়।
  • বাচ্চার শরীরে অনেক বেশি জ্বর আসে।
  • শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
  • শরীরে পানি জমে যায়।
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
  • মলমুত্রের সাথে রক্ত বের হয়।
  • শিশু অনেক বেশি পরিমানে অস্থির হয়ে যায়।
  • পেটে ব্যথার মত সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এতক্ষন আমরা শিশুর ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন লক্ষন সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা জানবো শিশুর ডেঙ্গু রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা সম্পর্কে। প্রতিরোধের উপায়সমুহ নিম্নরুপঃ
  • বাচ্চার ডেঙ্গু দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
  • টিকা বা ইনজেকশন দিয়ে নেওয়া উচিত।
  • বাচ্চাকে ঘুমানোর পূর্বে মশারি দিয়ে দেওয়া উচিত।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

পূর্বে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে। ডেঙ্গু হলে আমাদের কিছু খাবার আছে যা খাওয়া উচিত এবং কিছু খাবার আছে যা সেসময় আমাদের ক্ষতির কারন হতে পারে। এখন চলুন জেনে নেই ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে।
  • ডেঙ্গু রোগীর পানি এবং তরল খাবার খাওয়া উচিত। ডেঙ্গু রোগীর একদিনে প্রায় ৩ লিটার মত পানি পান করা উচিত।
  • ভিটামিন সি যুক্ত ফল যেমন- আম, লেবু, বেদানা, আপেল এবং মাল্টার মত ফল খাওয়া উচিত।
  • নরম ভাত, ডিম, মাংস, মাছ এবং ডাল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। কারন এই সময় আমাদের অনেক বেশি শর্করা এবং প্রোটিন জাতীয় খাবারের অনেক বেশি প্রয়োজন হয়।
  • প্রতিবেলার খাবারে ঝোলজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
  • সবজি এবং মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খাওয়া উচিত।

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

পূর্বে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো ডেঙ্গু জ্বর ছোয়াচে কি না তা সম্পর্কে। মশা সাধারনত ডেঙ্গু রোগের জীবানু বহন করে। এই মশা আমাদের শরীরে কামড় দিলে আমাদের ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে।
যেহেতু মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় তাই এটি ছোয়াচে রোগ নয়। রোগীর মাধ্যমে একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে এই রোগের জীবানু প্রবেশের কোনো সম্ভাবনা নেই।

লেখকের মন্তব্য

আজকের পোস্ট থেকে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে, ডেঙ্গু রোগের কারণ, ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কীভাবে ঘটে, শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানলাম।
আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। এই ধরনের পোস্ট আমরা আপনাদের উদ্দেশ্যে প্রায়ই শেয়ার করে থাকি। প্রতিদিন পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন এবং নিয়মিত আপডেট থাকুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

One Comment