শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি কি কি? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গত বৃহস্পতিবার ‘রিমেমবারিং দ্য হিরোস’ শিরোনামে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কর্মসূচির কথা জানান আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশিদ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ কর্মসূচিতে নির্যাতনের ভয়ংকর দিন-রাতগুলোর স্মৃতিচারণা, শহীদ ও আহতদের নিয়ে পরিবার এবং সহপাঠীদের স্মৃতিচারণা, এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হওয়া নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে চিত্রাংকন/গ্রাফিতি, দেওয়াল লিখন, ফেস্টুন তৈরি ও ডিজিটাল পোট্রের্ট তৈরি করা হবে। এছাড়া শহীদদের স্মরণে যেকোনো কন্টেন্ট বা লেখা লিখে নিম্নোক্ত হ্যাশট্যাগ (#JulyMassacre #RememberingOurHeroes) ব্যবহার করে অনলাইনে ও অফলাইনে প্রচার করা হবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।

ছাত্রদের ৯ দফা দাবি কি কি?

১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

২। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেশে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে পদত্যাগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শহীদ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ড্রাগ এডিক্ট বলে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে এবং আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে পদত্যাগ করতে হবে।

৩। ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র-নাগরিক শহীদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।

৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টরদেরকে পদত্যাগ করতে হবে।

৫। যে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যে সকল সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলা পরিচালনা করেছে এবং যেসকল নির্বাহী মেজিস্ট্রেট পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদেরকে নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিকদের উপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে তাদেরকে আটক করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।

৬। দেশব্যাপী যেসকল ছাত্র-নাগরিক শহীদ এবং আহত হয়েছে তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

৭। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনসহ সকল দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে দ্রুততম সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে

৮। অবিলম্বে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিয়ে সারাদেশের সমস্ত ক্যাম্পাসে মোতায়েনকৃত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াট এবং আর্মি তুলে নিতে হবে।

৯। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। ইতিমধ্যে গণগ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির শিকার সমন্বয়কবৃন্দ ও ছাত্র-নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ও সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

আমরা সারাদেশের শিক্ষক, পেশাজীবি, শ্রমজীবী ও সকল নাগরিককে আমাদের কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও আমাদের দাবী আদায়ের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাদের বহু সমন্বয়ককে গুম করে মিডিয়া ট্রায়ালে ব্যবহার করা হচ্ছে। দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাটডাউন কর্মসূচি চলবে।’

আরও দেখুনঃ কোটা আন্দোলন নিয়ে ক্যাপশন, উক্তি, স্লোগান ও স্ট্যাটাস

School Student movement

রবিবার থেকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক শিক্ষার্থীদের

আগামী রবিবার (৪ আগস্ট) থেকে লাগাতার  ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগে আগামীকাল শনিবার (৩ আগস্ট) সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা।শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বিবৃতিতে বলা হয়, “সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে হত্যার প্রতিবাদে এবং ৯ দাবিতে আগামীকাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলো।

teachers action

বিবৃতিতে, সারা দেশের আপামর জনসাধারণকে অলিতে-গলিতে, পাড়ায় পাড়ায় সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হয়।

এর আগে শুক্রবার রাত ৮টার কিছু আগে ফেসবুকে লাইভে এই কর্মসূচির বিষয় ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘শুক্রবার সারা দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালানো হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, “সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে হত্যার প্রতিবাদে এবং ৯ দাবিতে আগামীকাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলো।

Leave a Reply