ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা । মিনি স্ট্রোকের লক্ষণ

আজকের পোস্ট এর মুল বিষয় হলো ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের পোস্ট এ আমরা মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ, ব্রেন স্ট্রোক এর লক্ষণ, স্ট্রোক হলে করনীয়, হার্ট স্ট্রোক এর লক্ষণ, হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করবো।

 

ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা । মিনি স্ট্রোকের লক্ষণ
ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা । মিনি স্ট্রোকের লক্ষণ
তাহলে চলুন জেনে নেই স্ট্রোক সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে।

মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ

ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে আমরা একটু পরে জানবো। এখন চলুন জেনে নেই মিনি স্ট্রোক এর বিভিন্ন লক্ষন সম্পর্কে। মিনি স্ট্রোক কে বড় ঝুকি বলা হয়। কারন মিনি স্ট্রোক হবার ৯০ দিন এর মধ্যে বড় ধরনের স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা থাকে।
অনেকেই আছেন যারা মিনি স্ট্রোক কে তেমন একটা পাত্তা দেন না। সবসময় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টা সম্পূর্ণ ভুল। মিনি স্ট্রোক কে প্রাধান্য দিলে পরবর্তীতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বেচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মিনি স্ট্রোক হলো আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে থাকা স্পাইনাল কর্ড বা রেটিনাতে যদি কিছু সময়ের জন্য রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, সেই অবস্থাকে মিনি স্ট্রোক বলা হয়। মিনি স্ট্রোক খুব অল্প সময়ের জন্য হয়ে থাকে। এর কারনে আমাদের শরীরের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না।
কিন্তু এই মিনি স্ট্রোক এর কারনে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখন চলুন জেনে নেই মিনি স্ট্রোক এর বিভিন্ন লক্ষন সম্পর্কে। লক্ষনগুলি নিম্নরুপঃ
  • কোনো কারন ছাড়াই আমাদের মাথা ব্যথা বা যন্ত্রনা শুরু হয়।
  • মুখ বিকৃত আকার ধারন করে।
  • মাথা ঘোরা শুরু হয়।
  • অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • চোখে কিছু সময়ের জন্য ঝাপসা দেখা যায়। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য চোখে দৃষ্টি শক্তি থাকে না।
  • আমাদের চোখের পাতা অনবরত খোলা এবং বন্ধ হতে থাকে।
  • শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়।
  • কথা জড়িয়ে আসে।
  • হাত এবং পা জাগিয়ে রাখতে অনেক বেশি কষ্ট হয়।

ব্রেন স্ট্রোক এর লক্ষণ

পরবর্তীতে আমরা ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানবো। এখন চলুন জেনে নেই ব্রেন স্ট্রোক এর বিভিন্ন লক্ষন সম্পর্কে। আমাদের মস্তিষ্কে স্পাইনাল কর্ড থাকে। যা মস্তিষ্কের মধ্যে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু কোনো কারনে এই কর্ড এর মধ্যে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হলে স্পাইনাল কর্ড ছিড়ে যায়।
যার কারনে আমাদের মস্তিষ্কে অতিরিক্ত পরিমানে রক্তক্ষরন হতে থাকে। এই অবস্থাকে ব্রেন স্ট্রোক বলা হয়। ব্রেন স্ট্রোক হলে আমাদের শরীরে নানা রকম লক্ষন দেখা দেয়। তার মধ্যে প্রধান হলো পুরো শরীর অথবা শরীরের যেকোনো একপাশ অবশ হয়ে যায়।
স্ট্রোক করা রোগীকে দেরি না করে নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত এবং পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া উচিত। এখন চলুন জেনে নেই ব্রেন স্ট্রোক এর লক্ষন সম্পর্কে। লক্ষনসমুহ নিম্নরুপঃ
  • আমাদের শরীরের একপাশ হঠাত করে অবশ হয়ে যায়।
  • কথা বলতে সমস্যা বা কথায় জড়তার সৃষ্টি হয়।
  • আমাদের কিছু সময়ের জন্য চোখের দৃষ্টি শক্তি চলে যায়।
  • আমাদের হাটতে সমস্যা হয়।
  • হঠাত মাথা ঘোরা শুরু হয়।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • কোনো কারন ছাড়াই মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা হতে শুরু করে।

ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা

স্ট্রোক এমন এক ধরনের রোগ যা স্বল্প সময় হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেহে তার প্রতিক্রিয়া সারাজীবন এর জন্য থেকে যায়। আমাদের প্রতিদিনের কাজের চাপ, মানসিক প্রেশার, বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা ইত্যাদির কারনে আমাদের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে অনেক বেশি চাপ পড়ে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরন হয়ে থাকে। এই অবস্থাকেই স্ট্রোক বলা হয়।
স্ট্রোক হলে আমাদের শরীর অবশ হয়ে যায়। যাকে প্যারালাইসিস বলা হয়। ব্রেন স্ট্রোক করা রোগীদের সব ধরনের খাবার দেওয়া হয় না। কিছু খাবার আছে যা তাদের দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। এখন চলুন জেনে নেই কোন ধরনের খাবার ব্রেন স্ট্রোক রোগীরা খেতে পারবে এবং কোনগুলো পারবে না।
যেসব খাবার খেতে পারবেঃ
 
  • শাকসব্জি এবং ফলমূল জাতীয় খাবার – ফলমূল এবং শাকসব্জিতে অনেক বেশি পরিমানে পটাশিয়াম এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। যা আমাদের দেহে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। গবেষকরা জানান, পটাশিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহনের ফলে ২৫% এর মত স্ট্রোক এর ঝুকি কমানো সম্ভব।
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার – আমাদের দেহে থাকা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করতে এবং ওজন হ্রাস করতে ফাইবার জাতীয় খাবার এর ভূমিকা অপরিসীম। শুধু তাই নয় ফাইবারযুক্ত খাবার স্ট্রোক এর ঝুকি কমাতেও অনেক বেশি সাহায্য করে।
  • প্রোটিনজাতীয় খাবার – বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন জাতীয় খাবার আমাদের দেহে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে। যার ফলে আমাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • ওমেগা-৩ জাতীয় খাবার – ওমেগা-৩ হলো এক ধরনের ফ্যাটি এসিড। যা আমাদের মস্তিষ্কের ধমনি এবং হৃদপিণ্ডে থাকা প্ল্যাংক পরিস্কার করে থাকে। এর ফলে আমাদের স্ট্রোক এবং হৃদ রোগের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
  • লাইকোপেন সমৃদ্ধ খাবার – টমেটো, পেয়ারা, চেরিফল, গাজর, তরমুজ ইত্যাদি খাবার আমাদের স্ট্রোক এর ঝুকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার – ম্যাগনেসিয়াম আমাদের মস্তিষ্কে স্ট্রোক এর সম্ভাবনাকে অনেক কমিয়ে দেয়।
  • ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার স্ট্রোক এর ঝুকি কমায়।
  • ভিটামিন-ই এবং বেরিজাতীয় বিভিন্ন ধরনের ফল আমাদের মস্তিষ্কের স্ট্রোক এর ঝুকি কমাতে সাহায্য করে।
যেসব খাবার খেতে পারবে নাঃ
 
  • অতিরিক্ত পরিমানে লবনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
  • চিনি বা চিনি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত।
  • অনেক খাবার আছে যেগুলো অনেক বেশি চর্বি যুক্ত থাকে। এই ধরনের খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত।
  • লাল রঙের মাংস আমাদের স্ট্রোক এর ঝুকি বাড়ায়। তাই এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • বাইরে প্যাকেট করা বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • ধুমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • এলকোহল পান থেকে বিরত থাকতে হবে।

স্ট্রোক হলে করনীয়

পূর্বে আমরা ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো ব্রেন স্ট্রোক হলে আমাদের কি করা উচিত। ব্রেন স্ট্রোক এর কারনে আমাদের শরীর অবশ হয়ে যায়, আমরা কিছু করতে পারি না, আমাদের দৃষ্টি শক্তি ক্ষুন্ন হয়।
এই অবস্থায় আমরা কিছু করতে পারি না। কারন তখন আমাদের সে অবস্থা থাকে না। এখন চলুন জেনে নেই স্ট্রোক হয়ে আমাদের মস্তিষ্কে রক্তপাত হলে আমাদের কি করা উচিত তা সম্পর্কে।
  • রোগীকে কাত করে শোয়াতে হবে।
  • মুখে জমে থাকা বমি এবং লালা পরিস্কার করে দিতে হবে।
  • গায়ে থাকা জামা কাপড় খুলে দিতে হবে।
  • রোগীকে খুব দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
  • যেসকল ওষুধ রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে, সেসকল ওষুধ সেবন করা।
  • মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরন বা চাপ কমাতে সার্জারি করা।
  • রক্তনালী ছিড়ে গেলে বা ভেঙ্গে গেলে তা ঠিক করার জন্য সার্জারি করা।
  • মস্তিষ্কের মধ্যে কিছু দিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করা।

হার্ট স্ট্রোক এর লক্ষণ

ইতিপূর্বে আমরা ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনেছি। এখন চলুন জেনে নেই আমাদের হার্ট স্ট্রোক হলে কি কি লক্ষন দেখা দেয়। হার্ট স্ট্রোক হলো আমাদের হৃদপিণ্ডে হওয়া এক ধরনের সমস্যা বা জটিলতা।
হার্ট স্ট্রোক করলে একজন ব্যক্তির হার্টে থাকা শিরাগুলো কোনো কারনে ছিড়ে যায়। যার কারনে হার্ট এ রক্তক্ষরন শুরু হয়। এই অবস্থাকে হার্ট স্ট্রোক বলা হয়। হার্ট স্ট্রোক হলে একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
যার কারনে কোনো ব্যক্তি হার্ট স্ট্রোক এর শিকার হলে তাকে খুব দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। এখন চলুন জেনে নেই হার্ট স্ট্রোক এর লক্ষন সম্পর্কে। লক্ষনসমূহ নিম্নরুপঃ
  • আমাদের বুকের মাঝখানে অনেক বেশি ব্যথা করে।
  • হাত এবং ঘাড়ে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
  • তলপেটে অনেক বেশি পরিমানে ব্যথা হতে থাকে।
  • কাশির সমস্যা শুরু হয়।
  • হঠাত করে শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়।
  • শরীরে অতিরিক্ত পরিমানে ঘাম হতে থাকে।
  • হঠাত করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা শুরু হয়।
  • কোনো কারন ছাড়াই বমি বমি ভাব দেখা দেয়।

হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ

যখন পরিবেশের অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারনে আমাদের শরীরের তাপমাত্রাও অনেক বেশি পরিমানে বেড়ে যায় অর্থাৎ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত পৌছে যায়। সেই অবস্থাকে হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোক বলে।
এই সময় আমাদের ত্বক লাল হয়ে যায়, প্রচন্ড মাথাব্যথা শুরু হয়, মাথা ঘুরতে থাকে এবং কাজের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এখন চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক এর বিভিন্ন লক্ষন সম্পর্কে। লক্ষনগুলি নিম্নরুপঃ
  • অনেক বেশি মাথা ব্যাথা শুরু হয়।
  • হঠাত করে অনেক বেশি তৃষ্ণা লাগে।
  • দেহে পানিশুন্যতা দেখা দেয়।
  • অতিরিক্ত পরিমানে ঘাম হতে থাকে।
  • আমাদের হার্ট বিট বেড়ে যায়।
  • শ্বাসকষ্টের মত সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • কোনো কারন ছাড়াই বমি বমি ভাব শুরু হয়।
  • আমাদের কথার জড়িয়ে যায়।
  • হঠাত করে পেশীতে ব্যথা শুরু হয়।
  • শরীরে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • অনেকে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

লেখকের মন্তব্য

আজকের পোস্ট থেকে আমরা ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা, মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ, ব্রেন স্ট্রোক এর লক্ষণ, স্ট্রোক হলে করনীয়, হার্ট স্ট্রোক এর লক্ষণ, হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি।
আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। প্রতিদিন এই ধরনের পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন এবং নিয়মিত আপডেট থাকুন।

Leave a Reply