আজকের পোস্ট এর মুল বিষয় হলো হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ কি কি | হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের পোস্টে হিট স্ট্রোক কখন ও কেন হয়, হিট স্ট্রোক এর কারণ, হিট স্ট্রোক হলে করনীয়, হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা, হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে।
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ কি কি | হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ কি কি | হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ

তাহলে চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে।

হিট স্ট্রোক কি

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমরা একটু পরেই জানবো। এখন চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক আসলে কি তা সম্পর্কে। বর্তমান সময় গরমের সময়। যত দিন যাচ্ছে গরমের মাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এই গরমের মধ্যে আমাদের বিভিন্ন কারনে ঘরের বাইরে বের হতে হয়।
যেমন- কেউ অফিসে যান, কেউবা নিজের কাজে বের হন, বাড়ির জন্য অনেকে বাজার করতে বাইরে যান ইত্যাদি। এই গরমের মধ্যে বাইরে গেলে যদি কোনো কারনে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করে ফেলে তখন তাকে হিট স্ট্রোক বলে।
এই সময় আমাদের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে, চোখে ঝাপসা দেখা বা দেখতে না পাওয়া, খিচুনী এবং অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

হিট স্ট্রোক কখন ও কেন হয়

পূর্বে আমরা হিট স্ট্রোক কি তা সম্পর্কে জেনেছি। একটু পরে আমরা হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানবো। এখন আমরা হিট স্ট্রোক কখন এবং কেন হয় তা সম্পর্কে জানবো। হিট স্ট্রোক হওয়ার বিভিন্ন সময় রয়েছে।
যেমন- আমরা যখন অনেক গরমের মধ্যে বাইরে যাই তখন আমাদের অতিরিক্ত রোদের কারনে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত পরিমানে চর্বিযুক্ত খাবার খেলে আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ শুরু হয় এবং শরীর গরম হতে শুরু করে।
এ অবস্থায় রোদে গেলে আমাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরমের দিনে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি দেহ থেকে বাইরে বের হয়ে যায়। এই অবস্থায় আমাদের শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। সেই সময় আমাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হিট স্ট্রোকের কারনে আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের লক্ষন দেখা দেয়। এখন আমরা সেই লক্ষনগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন জেনে নেই লক্ষনগুলো সম্পর্কে। লক্ষনসমুহ নিম্নরুপঃ
  • অনেক বেশি পরিমানে মাথা ব্যথা বা যন্ত্রনার সৃষ্টি হয়।
  • আমাদের অনেক বেশি পরিমানে তৃষ্ণা পেয়ে থাকে।
  • শরীরে পানিশুন্যতা দেখা দেয়।
  • আমাদের শরীরে অনেক বেশি ঘাম হয়।
  • আমাদের হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায়।
  • শ্বাসকষ্ট এর মত সমস্যা শুরু হয়।
  • কোনো কারন ছাড়া বমি ভাব দেখা দেয়।
  • যেকোনো কাজে বিরক্তি চলে আসে।
  • আমাদের কথা বলতে সমস্যা হয়।
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হতে শুরু করে।
  • নিজেকে অনেক বেশি দুর্বল মনে হয়।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হয়ে যায়।

হিট স্ট্রোক এর কারণ

পূর্বে আমরা হিট স্ট্রোক কি এবং কখন হয়ে থাকে তা সম্পর্কে জানলাম। পরবর্তীতে আমরা হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানবো। এখন চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক হওয়ার কারন সম্পর্কে।
অনেকগুলো কারনের মধ্যে হিট স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারন হলো অতিরিক্ত গরম। গরমের কারনে আমাদের এই সমস্যা হয়ে থাকে। চলুন এছাড়াও আরও কয়েকটি কারন সম্পর্কে আমরা জেনে নেই। কারনসমুহ নিম্নরুপঃ
  • আমাদের চারপাশের উচ্চ তাপমাত্রা
  • আমাদের শরীরে পানির অভাবে ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়া
  • কিছু ঔষধ রয়েছে যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনে আমাদের হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে।
  • যদি আমাদের হৃদপিণ্ডের কোনো অসুখ থাকে সেক্ষত্রে হিট স্ট্রোক হয়।
  • আমাদের স্কিন এর প্রবলেম এর কারনে হিট স্ট্রোক হয়।

হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ

পূর্বে আমরা হিট স্ট্রোক কি তা সম্পর্কে জেনেছি। একটু পরে আমরা হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানবো। তার আগে এখন চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক এ কেউ আক্রান্ত হলে সাথে সাথে কি করা উচিত তা সম্পর্কে। হিট স্ট্রোক হলে করনীয় বিষয়গুলো নিম্নরুপঃ
  • রোগীকে দ্রুত ঠান্ডা এবং শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে।
  • সম্ভব হলে ফ্যান অথবা এসির নিচে বসিয়ে রাখতে হবে।
  • কাপড় ভিজিয়ে খুব দ্রুত রোগীর দেহ মুছে দিতে হবে।
  • সম্ভব হলে গোসল করিয়ে দিতে হবে।
  • প্রচুর পরিমানে পানি পান করাতে হবে।
  • স্যালাইন খাওয়ালে সবথেকে ভালো হয়।
  • শরীরের জামা কাপড় খুলে দিতে হবে।
  • বাতাস করতে থাকতে হবে।
  • শরীরের বিভিন্ন স্থানে বরফ লাগিয়ে দিতে হবে।
  • যদি সমস্যা বেশি মনে হয় তাহলে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে যে উপায়গুলো অবলম্বন করা উচিত তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো। হিট স্ট্রোক কি তা সম্পর্কে আমরা পূর্বে জেনেছি। সেখানে আমরা জেনেছিলাম গরমে যদি কোনো কারনে আমাদের দেহের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে যায়, সেই অবস্থাকে হিট স্ট্রোক বলা হয়।
হিট স্ট্রোক হলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এখন চলুন জেনে নেই হঠাত যদি কেউ এই হিট স্ট্রোক এ আক্রান্ত হয় তাহলে তখন আশেপাশের মানুষের কোন ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া উচিত তা সম্পর্কে।
  • প্রথমে রোগীকে ঠান্ডা স্থানে নিয়ে যেতে হবে।
  • তার শরীরের সব জামা কাপড় খুলে দিতে হবে।
  • তাকে সবসময় বাতাস করতে থাকতে হবে।
  • ফ্যান বা এসির নিচে রোগীকে রাখতে হবে।
  • গোসল করালে সবথেকে বেশি ভালো হয়।
  • শরীরের বিভিন্ন স্থানে বরফ দিয়ে দিতে হবে।
  • রোগীকে প্রচুর পরিমানে পানি এবং তার সাথে স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
  • অবস্থা গুরুতর হতে থাকলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ

হিট স্ট্রোক কে অনেকে সান স্ট্রোক নামেও চিনে থাকে। গ্রীষ্মের দাবদাহে আমাদের এই সান স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিভিন্ন কাজে মানুষ এই সময় বাইরে থাকে। যার কারনে সেই সময় আমাদের গরম লাগার সম্ভাবনা থাকে।
অতিরিক্ত গরম লাগার কারনে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পেরোলেই এই হিট স্ট্রোক এর সম্মুখীন হতে হয়। এখন চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোকের লক্ষন সম্পর্কে। লক্ষনসমুহ নিম্নরুপঃ
  • আমাদের শরীরে ঘাম হওয়া হঠাত বন্ধ হয়ে যায়।
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং লালচে বর্ণ ধারন করে।
  • আমাদের নিঃশ্বাস অনেক দ্রুত চলতে থাকে।
  • হৃদ স্পন্দন কমে যেতে শুরু করে।
  • আমাদের শরীরে রক্তচাপ কমে যেতে শুরু করে।
  • প্রসাবের পরিমান কমে যায়।
  • রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এতক্ষন আমরা হিট স্ট্রোক এর লক্ষন সম্পর্কে জানলাম। এখন চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার সম্পর্কে। প্রতিকার সমূহ নিম্নরুপঃ
  • বাইরে বের হলে ঢিলে পোশাক পরা।
  • সাদা অথবা হালকা রঙ্গিন পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া।
  • পানির বোতল সবসময় সাথে রাখা।
  • সম্ভব হলে সবসময় ছাতা নিয়ে বাইরে যাওয়া।
  • ছাতা না থাকলে চওড়া কিনারা যুক্ত টুপি পরে বাইরে যাওয়া।
  • তবে গরমে কোনো কারন ছাড়া বাইরে না যাওয়াই ভালো।

হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার

  • বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ঢিলে এবং হাল্কা রঙের পোশাক পরা উচিত।
  • প্রচুর পরিমানে পানি পান করা উচিত।
  • শরীর যেন ডিহাইড্রেটেড না হয়ে পড়ে সেজন্য আমাদের লক্ষ রাখা।
  • অতিরিক্ত গরমে এলকোহল সেবন না করা।
  • গরমকালে মিনারেলযুক্ত ফলমূল যেমন- তরমুজ, শসা, কলা ইত্যাদি খাওয়া।
  • গরমে অনেক কঠিন এবং জটিল কাজে নিজেকে যুক্ত না করা।
  • একোয়া ব্যায়াম করা।
  • সময় থাকলে সাতার কাটা উচিত।
  • দিনের অধিক সময় বাইরে থাকলে চেষ্টা করতে হবে অল্প সময় কাজ করে শীতল স্থানে রেস্ট নেওয়া।
  • ঘরে থাকলে ফ্যান দিয়ে রাখা।
  • দূরে কোথাও গরমের মধ্যে ভ্রমন না করা।

লেখকের মন্তব্য

আজকের পোস্ট থেকে আমরা হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ কি কি, হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ, হিট স্ট্রোক কখন ও কেন হয়, হিট স্ট্রোক এর কারণ, হিট স্ট্রোক হলে করনীয়, হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা, হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি।
আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। এই ধরনের পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন এবং প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

One Comment